'ওপারেতে বন্ধুর বাড়ি এপারেতে আমি। মাঝখানে ভরাগাঙে ঢেউয়ের মাতলামি। কুমার বিশ্বজিতের এ গানটি যেন চোখের সামনে ছবি হয়ে ভেসে ওঠে রাঙামাটির প্রত্যান্ত দুর্গম সীমান্ত ছোট হরিণার থেগামুখ অঞ্চলে গেলে। সেখানে গেলেই দেখা মিলে ভারত-বাংলাদেশের মিলন মেলা। সেখানকার পাগল করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কোন মানুষকেই বিমোহিত করবে। কর্ণফুলী নদীর একপাশে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জেলে, আরেকপাশে ভারতীয় পতাকাবাহী জেলে। মাছ ধরছে তারা একসঙ্গেই। যেন একই সুতোয় বাঁধা জীবন ঘুরপাক খাচ্ছে নদীর নীল জলে।
দু’দেশের বড় বড় পাহাড়ের মাঝখানে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলী নদীর স্বচ্ছ জলের প্রবাহ আর নয়নাভিরাম পাহাড়ি গ্রামের সৌন্দর্য যেন বার বার হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এই এলাকার অর্থনৈতিক এবং পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বদলে যাবে এখানকার জনজীবন। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতেও বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। আর সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এখনই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
রাঙামাটি শহর থেকে ৬ ঘন্টার নৌ দূরত্বে অবস্থিত বরকল উপজেলার ছোট হরিণা বাজার। সেখান থেকেও অন্তত দুই ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় বড়হরিণা, তবলাবাগ, থেগামুখ অঞ্চলে। এখানে ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় পায়ে হেঁটেই সীমান্ত পাহারা দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ্ ২৫ ব্যাটালিয়নের জওয়ানরা। ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী ওই এলাকাটিতে বিজিবি ছাড়া অন্য কোন বাহিনীর উপস্থিতি নেই। সেখানে জীবন যেন বড় কঠিন। নেই বিশুদ্ধ পানি, টেলিফোন নেটওয়ার্ক, বিদুৎ, পর্যাপ্ত নৌযান, যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম।
এ কারণেই বোধহয় এখানে নেই বড় ধরনের চোরাচালানের ঘটনা। যেহেতু সীমান্তের উভয় পাড়ে বসবাসকারী মানুষ সবাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, তাই তাদের ভাষা, সংস্কৃতি প্রায় এক ও অভিন্ন। সীমান্তবর্তী উভয় পাড়ের মানুষের হৃদয়ের বন্ধনের প্রতি শ্রদ্ধা আছে বিজিবি-বিএসএফ উভয়েরই। তাই তারা সীমান্ত পাহারায় কখনও কখনও যান্ত্রিকতার চেয়ে হৃদয়বৃত্তিকেই প্রাধান্য দেন। এখানে বিজিবি-বিএসএফ সম্পর্কও বন্ধুত্বপূর্ণ। নিয়মিত হয় পতাকা বৈঠক।
থেগামুখ স্থানীয় এলাকাবাসী সাধন মণি চাকমা জানায়, এ অঞ্চলে এমন অনেকে আছেন যাদের শ্বশুর বাড়ি সীমান্তের ওই পাড়ে। শ্বশুর বাড়ি যেতে কখনও খুব একটা সমস্যা হয় না তাদের। দেশের অন্য এলাকায় সীমান্তে কোন সমস্যা হলে এখানে বিজিবি-বিএসএফ কিছুটা সর্তক হয়। তখনই মাঝে মাঝে সমস্যা হয়। তবে ওই এলাকায় সীমান্তে কোন সমস্যা তারা দেখেনি।
থেগামুখ বাজারের এক ব্যবসায়ী মন মহোন দেওয়ান সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- ওই সীমান্ত দিয়ে সাধারণত দৈনন্দিন সামগ্রী, সাবান, চা পাতা, দুধ, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট ও চিপস বাংলাদেশে আসে। এসব জিনিসের প্রতি সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের আগ্রহ বেশি। তবে কোন ধরনের বাণিজ্য্যিক উদ্যোগ না থাকায় এসব পণ্য জ্ঞাতসারেই এবং প্রকাশ্যে অবৈধ পণ্য হিসেবেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ট্রানজিট পয়েন্ট হলে এসব পণ্যে চোরাচালান হবে না বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বিডি-প্রতিদিন/১৩ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ