আজ ১৪ মার্চ। সর্বকালের সেরা পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন। ১৮৭৯ সালের এ দিনে জার্মানির উর্টেমবার্গে উলম শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার শৈশব কেটেছিল মিউনিখে। ক্যাথলিক এলিমেন্টারি স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয় তার।
জন্ম সনদ অনুযায়ী ১৩৫ নং ব্যানহফস্ট্রাফ (বি), উল্ম নিবাসী ইহুদী ধর্মে বিশ্বাসী ব্যবসায়ী হেরমান আইনস্টাইন জানিয়েছেন যে তাঁর উল্ম এর বাসায় তাঁর সাথে বসবাসকারী ইহুদী ধর্মে বিশ্বাসী তাঁর স্ত্রী পলিন আইনস্টাইন (কোচ) ১৪ মার্চ ১৮৭৯ তারিখের সকাল এগারোটা ত্রিশ মিনিটে একটি পুং লিঙ্গের শিশু জন্ম দিয়েছেন। শিশুটির নাম রাখা হয়েছেন আলবার্ট।
E=mc2 ফর্মূলার প্রবক্তা আইনস্টাইনের বাবা-মা ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ মধ্যবিত্ত ইহুদি। তার মা পলিন কোচ। আইনস্টাইন তাঁর বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিশেষত ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র আবিষ্কারের জন্য ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল বিজয়ী এই বিজ্ঞানীর জন্মদিন আজ। তার প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
আইনস্টাইন বরাবরই স্কুলে খুব ভালো ও মেধাবী ছাত্র ছিলেন। আইনস্টাইনের প্রথম স্কুল ছিল ক্যাথলিক এলিমেন্টারি স্কুল। তার কথা বলার ক্ষমতা খুব একটা ছিল না তবে বাকপটুতা না থাকলেও তিনি এলিমেন্টারি স্কুলের সেরা মেধাবী ছাত্র ছিলেন। এ সময় থেকেই গণিতের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ ও মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৮, ১৯, ২১ ও ৩০ তারিখে অনুষ্ঠিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তিনি জার্মান – ৫, ফ্রেঞ্চ – ৩, ইটালিয়ান – ৫, ইতিহাস – ৬, ভূগোল – ৪, এলজেব্রা – ৬, জ্যামিতি–৬, বর্ণনামূলক জ্যামিতি–৬, পদার্থবিজ্ঞান–৬, রসায়ন– ৫' প্রাকৃতিক ইতিহাস – ৫, শৈল্পিক অংকন – ৪, কারিগরী অংকন – ৪ গ্রেড পান। তখনকার হিসেবমতে কোন বিষয়ে গ্রেড ৬ হলো সর্বোচ্চ গ্রেড। সে হিসেবে আইনস্টাইন গড়পড়তা ভালো ছাত্রদের দলেই ছিলেন। স্কুলে ইংরেজি ভাষা তিনি পড়েননি কখনো। বিদেশি ভাষা ফ্রেঞ্চ ও ইটালিয়ান পড়েছিলেন। ইটালিয়ানে ভালোই করেছিলেন। ফ্রেঞ্চ খুব একটা ভালো করেননি। এরপর ১২ বছর বয়সে তিনি জ্যামিতির একটি বইয়ের সাথে পরিচিত হন। এই বইটি অধ্যয়ন করে এত মজা পেয়েছিলেন যে একে আজীবন "পবিত্র ছোট্ট জ্যামিতির বই" বলে সম্বোধন করেছেন।
ছোটবেলায় পড়াশোনার পাশাপাশি মায়ের আগ্রহে বেহালা বাজানোও শিখেছেন। বাল্যকালে হঠাৎ ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন আইনস্টাইন। কিন্তু বিজ্ঞান পড়ে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ জাগার পর তার ধর্মীয় আগ্রহ কমে যেতে থাকে, কারণ ধর্মীয় বিশ্বাস ও বৈজ্ঞানিক সূত্র ছিল দ্বন্দ্বপূর্ণ।
তার বয়স যখন ১৫ বছর, তখন তিনি পরিবারের সঙ্গে জার্মানি ছেড়ে ইতালির মিলানে পাড়ি জমান। এর কিছুদিন পর চলে যান পাভিয়াতে। সেখানেই লেখেন তার প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র।
আইনস্টাইনের বাবা তাকে মিউনিখে বোর্ডিং স্কুলে রেখে গিয়েছিলেন। সেখানে তার উপর অনেক বেশি চাপ পড়ছিল বলে পরবর্তীতে তিনি তা ছেড়ে চলে আসেন। এরপর তাকে ইতালিতে আর কোনো স্কুলে ভর্তি করানো হয়নি। পরবর্তীতে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থিত সুইস ফেডারেল পলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান আইনস্টাইন।
আইনস্টাইনের চাকরিজীবন শুরু হয় একটি পেটেন্ট অফিসের সহকারী পরীক্ষক হিসেবে। তার কলেজ সহপাঠী মিশেল বেসোও এ অফিসে কাজ করতেন। তারা দুজন অন্য বন্ধুদের সঙ্গে বার্নের এক জায়গায় বিজ্ঞান ও দর্শন বিষয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হতেন। এভাবে একটি ক্লাব তৈরি করেন তারা। এই ক্লাবের নাম ছিল ‘দ্য অলিম্পিয়া একাডেমি’।
১৯১১ সালে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন আইনস্টাইন। পরবর্তীতে চার্লস ইউনিভার্সিটি অব প্রাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।
পদার্থবিজ্ঞানের উন্নয়নে আইনস্টাইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ‘টাইম’ সাময়িকী আইনস্টাইনকে শতাব্দীর সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ পদার্থবিজ্ঞানীর মতে আইনস্টাইন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী।
১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিন্সটনে এই বিজ্ঞানী মারা যান। আজ পদার্থবিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন। তাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন মহাবিজ্ঞানী।
বিডি-প্রতিদিন/১৪ মার্চ ২০১৫/ এস আহমেদ