আজ ইস্টার সানডে। এ দিনে যিশুর পুনরুত্থান ঘটে। খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব ও ছুটির দিন এটি। তখনকার ইহুদী রীতি অনুযায়ী মেরি ম্যাগডালিন যিশুর কবরগুহায় যান। উদ্দেশ্য মৃতদেহে সুগন্ধী মাখানো। কিন্তু তিনি দেখেন কবরশূন্য, কেউ নেই। এরপর ত্রাণকর্তা যিশু বিভিন্ন স্থানে শিষ্যদের দেখা দেন। তাদের শিক্ষা দেন। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশে খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকেন।
এর আগের রবিবারকে বলা হয় পাম সানডে। এ দিন অন্য এলাকা থেকে শেষবার গাধায় চড়ে জেরুজালেমে প্রবেশ করেন যিশু। ভক্তরা তাকে দেখতে রাস্তার দু’পাশে ভিড় জমান। তারা খেজুর পাতা ও পোশাক উড়িয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি অসুস্থ অনেককে সুস্থ করে তোলেন। পরের শুক্রবার ছিল ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দিন। যাকে বলা হয়, গুড ফ্রাইডে বা পূর্ণ শুক্রবার। এর আগের রাতে বারো শিষ্য নিয়ে খেতে বসেন যিশু। তারা রুটি ও পানীয় ভাগাভাগি করে খান। এর পরে জুদাসের বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি ইহুদীদের হাতে ধরা পড়েন। এর তিন দিন পর আসে ইস্টার সানডে।
দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের কৃত্য পালন করা হয়। তবে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বিভক্তির সঙ্গে সঙ্গে দিবসটি পালনেও ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- ক্যাথলিকরা এর আগের চল্লিশ দিন উপবাস পালন, অনুতাপ ও প্রার্থনা করে থাকেন। যিশুর চল্লিশ দিনের উপবাস অনুসারেই এ উপবাস পালন করা হয়। মানুষের আধ্যাত্মিক মঙ্গল সাধনের জন্য এ চল্লিশ দিনের উপবাস, প্রার্থনা, ত্যাগ স্বীকার, প্রায়শ্চিত্ত ও অনুতাপের মধ্য দিয়ে জীবনকে মূল্যায়ন করা হয়। প্রায়শ্চিত্তকাল হল আত্মশুদ্ধির সময়। অর্থাৎ যিশুর পুনরুত্থানের জন্য নিজের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। অন্যভাবে, যিশুর ক্রুশীয় মৃত্যু ও যাতনার কথা স্মরণ করে নিজের অন্তরে অনুতপ্ত হওয়া আর শুদ্ধ হয়ে ওঠার চূড়ান্ত সময়। তবে প্রটেস্টানরা উপবাস পালন করেন না। তাদের মতে, এ চল্লিশ দিনের শেষ সপ্তাহকে বলা হয় পবিত্র সপ্তাহ। এর মধ্যে পড়ে ইস্টার ট্রিডুম, হলি ট্রাসডে, শেষভোজ, পা ধৌতকরণ ও সর্বোপরি গুড ফ্রাইডে।
প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ইস্টারের তারিখ নির্ধারিত হয় না। তাই কখনো কখনো পৃথিবীর পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে এটি আলাদা তারিখে পালিত হয়। প্রথম দিকের খ্রীস্টান, ইহুদী ও জেন্টাইলরা যে হিব্রু ক্যালেন্ডার অনুসরণ করত, তাতে খ্রীস্টানদের কোনো বার্ষিক উৎসবের প্রমাণ নেই। দ্বিতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এসে ইস্টার উদযাপনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
৩২৫ সালের রোমের ফার্স্ট কাউন্সিল অব নিচেয়াতে ইস্টার পালনের দিন নির্ধারিত হয়। এতে বলা হয়, মার্চের একুনিক্স (দিন-রাত সমান থাকে) অনুসারে পূর্ণ চন্দ্রের পরের প্রথম রবিবার হল ইস্টার সানডে। পশ্চিমাঞ্চলে সাধারণত ইস্টারের সময় ২২ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে, পূর্বাঞ্চলের খ্রীস্টনরা নির্ভর করে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ওপর। এখানে সাধারণত ৪ এপ্রিল থেকে ৮ মে’র মধ্যে দিনটি পড়ে।
দিনটির সঙ্গে ইহুদীদের পাসওভারের সম্পর্ক রয়েছে। এটা অনেকটা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত। কোনো কোনো ভাষায় ইস্টার ও পাসওভার অভিন্ন বা খুব কাছাকাছি। পাসওভারের দিনে ইহুদীদের ব্যাবিলনের বন্দিদশা শেষ হয়।
দিনটি খ্রীস্টান বিশ্বের সব জায়গায় পালিত হয়। এ উপলক্ষে বিশেষ ভোজ ও চার্চ সাজানো হয়। যিশুর শূন্য কবরের প্রতিকরূপে ডিম সাজানো হয়। প্রার্থনা অনুষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন খ্রিস্টীয় সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এই বিশেষ দিনটি পালনের জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ এপ্রিল ২০১৫/ এস আহমেদ