বাঙালি খাবারের পছন্দের তালিকায় অন্যতম মেনু গরুর মাংস। কিন্তু এই গরুর মাংসের নামে আমরা কী খাচ্ছি? এমন প্রশ্ন এখন আর অবান্তর নয়। কেননা ওষুধ ও রাসায়নিকের মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। আর এতে রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। কোনরকম স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করে ভারত থেকে আমদানি করা গরুতেও রয়েছে একইরকম ঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এসব গরুর মাংস খেয়ে কিডনী, লিভার, হৃদপিণ্ডসহ মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্টসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী নারীর জন্য দুঃখজনক পরিণতি বয়ে আনতে পারে এসব গরুর মাংস। তারা জানান, একদিকে দেশের ভেতরে বিভিন্ন ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে, অন্যদিকে ভারত থেকে গরু আমদানির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণে ম্যাডকাউ, এনথ্রাক্সসহ যে কোনো পশুবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। ফলে ভোক্তা বাজার থেকে যে গরুর মাংস পাচ্ছেন, সেসব নিশ্চিতভাবে শতভাগ নিরাপদ বলা যায় না।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান বলেন, গরু মোটাতাজাকরণে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া, স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ ডেকাসন, ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন, বেটনেনাল, কর্টান, স্টেরন, এ্যাডাম-৩৩ ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এমনকি স্টেরয়েডের মতো মারাত্মক ইনজেকশনও গরুর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। তিনি আরও বলেন, গরু মোটাতাজা করার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিতে মোটাতাজা করতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগে। কিন্তু লোভী ব্যবসায়ীরা এ পদ্ধতি না মেনে ৩ সপ্তাহ থেকে ২ মাসের মধ্যে গরুকে মোটা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে থাকেন, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির কারণ। এ ছাড়া বাংলাদেশে জবাইকৃত গরুর শতকরা ৪০ ভাগই ভারত থেকে আসে।
প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও হেল্থ এ্যান্ড হোপের চেয়ারম্যান ডা. লেনিন চৌধুরী এর ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরে বলেন, ‘গরুর মাংসে এসব ওষুধের কার্যকারিতা রান্না করলেও নষ্ট হয় না। এ সব গরুর মাংস খাওয়ার ফলে রাসায়নিক পদার্থ মানবশরীরে ঢুকে কিডনী, লিভার, হৃদপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে লিভার ও কিডনীর রোগ দেখা দেয়। বিদ্যমান উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। এ ছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ মানবশরীরে বেশি মাত্রায় জমা হলে মানুষের বিপাক ক্রিয়াতেও প্রভাব পড়ে। মানুষও মোটাতাজা হতে থাকে, কিন্তু হাড় নরম হতে থাকে।’ এ মাংস মানুষের জন্য এবং বিশেষভাবে শিশু ও গর্ভবতী নারীর জন্য দুঃখজনক পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলেও জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ এপ্রিল, ২০১৫/ রোকেয়া।