চন্দন টিয়া। বিভিন্ন জাতের টিয়ার মধ্যে এই টিয়ার জুড়ি নেই। তবু এর নাম চন্দনা। মিষ্টি করে অনেকেই ডেকে থাকেন চন্দনা। টিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর আর স্বর নকল করার জন্য পোষা পাখি হিসেবে চন্দনা টিয়ার বেশ কদর।
বাংলাদেশে মহাবিপন্ন পাখি এই চন্দনা। ব্যবসায়ীরা চন্দনাকে ভারত থেকে নিয়ে আসে। এদের শুস্ক ও আদ্রপাতা ঝড়া বনেই বেশি দেখা যায়। চন্দনার বৈজ্ঞানিক নাম Psittaculidae (সিটাকুলিডি) বা বড় টিয়া। বাংলাদেশে ৭ রকমের টিয়া পাওয়া যায়। চন্দনা টিয়া, বাসন্তী লটকন টিয়া, মদন টিয়া, লালমাথা টিয়া, মেটেমাথা টিয়া, ফুল মাথা টিয়া ও সবুজ টিয়া। এ পাখির লেজ অনেক বড়। প্রায় ২৯ সেন্টিমিটার। লম্বায় ৫৩ সেন্টিমিটার। পুরুষ টিয়ার ঘারের পাশে আর গলায় স্পষ্ট গোলাপী রংয়ের দাগ আছে। পুরোদেশ সবুজে ভরা। ডানার মধ্য পালকে রয়েছে লালপট্টি। স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে গোলাপী মালাচোখে পড়ে না। ঠোট গাঢ় লাল। ঠোটের ডগা কমলা লাল। চন্দনা টিয়াদের প্রধান খাবার ফল, ধান, গম, ভুট্টা, ফুলের রস ইত্যাদি। প্রজনন কাল ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস। মাঝে মধ্যে কাঠ ঠোকরার পরিত্যক্ত বাসায়ও ডিম পাড়ে এরা। ডিমের সংখ্যা ৩ থেকে ৪। ফুটতে সময় লাগে ১৯ থেকে ২০ দিন।
গ্রীক মহাবীর আলেকজান্ডারের নামানুসারে চন্দনা টিয়ার নামকরন হয়েছে। তিনি এই পাখিকে বিখ্যাত ও সম্মানিত ব্যাক্তিদের রাজকীয় পুরস্কার বা প্রতীক হিসেবে উপহার দেওয়ার প্রচলন করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই এদের দেখা মেলে। লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারি ইউনিয়নে বিশাল এক শিমুল গাছ। সেখানে তিনটি চন্দনা টিয়ার বাসা ছিল। ২০০৮ সালের কথা। বাংলাদেশ র্বাড ক্লাবের সভাপতি আনাম আল হক এ বিষয়ে নিবন্ধ লিখেন। পরে আর তাদের কোন বাসার খোঁজ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি বগুড়ার শাহাজাহানপুর উপজলোর ডেমজানী বাজারের একটি বড় মেহগণি গাছে দ্বিতীয় বাসাটি আবিষ্কার করেছেন সেখানকার আজিজুল হক কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস এম ইকবাল এবং ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল সাবাহ। রাজশাহী বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ গাছটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। গাছে থাকা চন্দনাদের দেখভালের জন্য ওই গ্রামে একটি কমিটিও হয়েছে। গ্রামের মানুষরা এখন চন্দনাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৯ এপ্রিল, ২০১৫/ রোকেয়া।