২ মার্চ, ২০২১ ১৩:৩৮

কোরআনে বর্ণিত সুস্বাদু ত্বীন ফলের চাষ দিনাজপুরে

দিনাজপুর প্রতিনিধি

কোরআনে বর্ণিত সুস্বাদু ত্বীন ফলের চাষ দিনাজপুরে

মরুভূমির ত্বীন ফলের চাষ হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দিনাজপুরে। এতে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই ফলটি বেশ সুস্বাদু, পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও উচ্চ ফলনশীল। 

জানা গেছে, জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার মালারপাড়ায় মতিউল মান্নান নিজের চার বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন ত্বীন ফলের বাগান। গত অক্টোবরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা এই বাগানে এরই মধ্যে ফল ধরা শুরু হয়েছে।

নবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগ বলছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে এটিই প্রথম ত্বীন ফলের বাগান। রোগ-বালাই নাই বললেই চলে। এই ফলচাষে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ত্বীন ফলের উল্লেখ রয়েছে ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফে। নবাবগঞ্জের মালারপাড়া গ্রামে ত্বীন ফলের বাগান স্থানীয় যুবকদের প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ত্বীন গাছের কলম করে বিক্রির কাজও শুরু হয়েছে। আগামী মার্চ-এপ্রিল থেকে কলম বিক্রি হবে।

গাজীপুর থেকে ত্বীন ফলের চারা নিয়ে গত অক্টোবরে নিজের চার বিঘা জমিতে বাগান গড়ে তোলেন মতিউল। ত্বীন গাছে প্রথম তিন মাসের পর থেকেই ফল ধরছে এবং প্রতি বছর দ্বিগুণ হারে ফল ধরবে। বর্তমানে তার প্রতিটি গাছে আড়াই থেকে তিন কেজি ফল ধরেছে। এরপর ছয় কেজি এবং তার পরের বার ১০ কেজি- এভাবে ক্রমেই ফলন বাড়বে। প্রতিটি ত্বীন ফলের ওজন ৭০ থেকে ১১০ গ্রাম হয়। এটি দেশীয় কাকডুমুর থেকে বড়। ত্বীন গাছ ৩ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত বড় হয়। ঘন এবং খসখসে পাতায় ভরপুর থাকে। গাছ কমপক্ষে ১০০ বছর বাঁচে। এক নাগাড়ে ৩৫ বছরের সবসময়ই ফল দেবে। চাষি মতিউলের চার বিঘা জমির বাগানে এক হাজার গাছ রয়েছে। প্রথমবারেই ফল পাওয়া যাবে কমপক্ষে আড়াই টন। ঢাকার বাজারে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে পাওয়া যাবে ২৫ লাখ টাকা। বিদেশে রপ্তানি করলে আরও লাভবান হওয়া যাবে।

চাষি মতিউল জানান, ত্বীন বাগানে রোগ-বালাই তুলনামূলক কম হয়। তবে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। পরিচর্যার জন্য তার বাগানে ৭-৮ জন মানুষ সবসময় কাজ করেন। এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ২০ লাখ টাকা। প্রথম সময়েই খরচ। এরপর তেমন আর খরচ নেই। ত্বীন বাগান ও চাষ পদ্ধতি জানতে চাষি, সাধারণ মানুষ বাগানটি দেখতে ভিড় করছেন এবং এই ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। 

উপকার সম্পর্কে ত্বীন চাষি মতিউল বলেন, এই ফল দিয়ে জ্যাম, জ্যালি, চাটনি ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়। নানাবিধ পুষ্টি গুণের পাশাপাশি বহুবিধ ঔষধি গুণও রয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশে এর চাষাবাদ হয় এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। তিনি আরও জানান, এ ত্বীন ফল দেশে সারা বছর পুষ্টি ও ফলের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। 

মতিউল জানান, করোনার সময়ে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে ফিরে এসে অলস ও বেকার সময় কাটান। এ সময় কিছু একটা করার ইচ্ছা থেকে মোবাইলের ইউটিউব ব্যবহারের সময় চোখে পড়ে ত্বীন ফলের ভিডিও। ভিডিওটি দেখতে দেখতে মনে সাজিয়ে নেন বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফলের চাষ করবেন।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর