১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:৪৭

পাহাড়ের মাল্টা চাষ বেড়েছে সমতল ভূমিতে

রিয়াজুল ইসলাম দিনাজপুর

পাহাড়ের মাল্টা চাষ বেড়েছে সমতল ভূমিতে

পাহাড়ি অঞ্চলের মাল্টা এখন চাষ হচ্ছে দিনাজপুরের সমতল ভূমিতে। লিচু, আম, কমলা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলেও দিনাজপুরে এবারে মাল্টা চাষে আগ্রহী কৃষকরা। অল্প খরচে বেশি আয় এবং এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষে উপযুক্ত হওয়ায় ইতিমধ্যে মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। 

এছাড়াও মাল্টা চাষে বাগানে সাথী ফসল হিসাবে সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা যায়। মাল্টা চাষ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে প্রথমে কিছুটা হতাশা কাজ করলেও ফলন ভালো হওয়ায় তাদের হতাশা কেটে যায়। 

মাল্টা এখন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, বিরলসহ বিভিন্ন উপজেলার সমতল ভূমিতে চাষ হচ্ছে। এ অঞ্চলে মাল্টা আরও ব্যাপকহারে চাষ হলে দিনাজপুরে অর্থনৈতিকভাবে বিপ্লব সাধিত হবে বলে উদ্যেক্তারা আশা করছেন। কৃষক প্রশিক্ষণ ও উদ্ধুদ্ধকরণের মাধ্যমে এ অঞ্চলে মাল্টা চাষের ব্যাপক সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। 

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাল্টা বারি-১ একটি উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু ফল। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে চারা রোপণ করতে হয়। মাল্টা গাছ রোপণের দুই বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। মাল্টা গাছে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে ফল ধরে এবং এটি পরিপক্ক হয়ে কমলা রঙ ধারণ করে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। ফুল আসা থেকে শুরু করলে ফল পাকতে সময় লাগে অন্তত ৬ মাস। প্রথম মৌসুমে ফলন একটু কম হয়। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩০০-৪০০ মাল্টা পাওয়া যায়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, চিরিরবন্দরের নশরতপুর ইউপির দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের রাসেলের বাগানের গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে, ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় মাল্টা। বাতাসে মাল্টার টক-মিষ্টির গন্ধ। 

২০১৭ সালে চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা মাল্টা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু করে। কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বারি-১ জাতের মাল্টা গাছ সরবরাহ করা হয়। উত্তর নশরতপুর গ্রামের কৃষক আহসান হাবিবও মাল্টার বাগান করে সফলতা পেয়েছেন। তিনি ৩৩ শতক জমিতে মাল্টা চাষ করেন। এতে ৭২টি গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে এখন ঝুলছে মাল্টা। গাঢ় সবুজ রঙের মাল্টাগুলোর কোনটিতে হলুদ রঙ এসেছে।

বাগানের প্রতিটি গাছ থেকে ১৫-২০ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়। গত বছর তিনি তার বাগান থেকে অন্তত ৫০-৬০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। এবছর তিনি অন্তত লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করবেন বলে আশাপোষণ করেছেন। 

কৃষক আহসান হাবিব বলেন, পরিপক্ক মাল্টা খেতেও খুবই রসালো ও মিষ্টি। বর্তমানে তার জমির প্রতিটি গাছেই ফল ধরেছে। তার সাফল্য দেখে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তার পথ ধরে মাল্টা চাষ করেছেন একই গ্রামের ফিরোজ আহম্মেদ। তিনি ২৫ শতক জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। তার গাছেও ফল ধরেছে। উপজেলার ঈসবপুর ইউনিয়নের ব্যাঙ্গের কাদো গ্রামের মো. মাজেদুল ইসলাম এবং ফতেজংপুর ইউনিয়নে মো. আব্দুল জলিল মাল্টা চাষ করছেন। 

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, বারি মাল্টা দেশে উদ্ভাবিত এক প্রকার সাইট্রাস জাতীয় ফল। মাল্টা একটি অর্থকরি ফসল। এটি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। 

উল্লেখ্য, ভৌগলিক কারণে দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি কমলা এবং মাল্টা চাষের জন্য উপযুক্ত এবং উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানায়। ২০১৫ সালে প্রাথমিকভাবে বীরগঞ্জে ৩টি স্থানে বারিমাল্টা-১ জাতের মাল্টা গাছ রোপণের মধ্যে দিয়ে মাল্টা চাষের যাত্রা শুরু করে। 


বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর