বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

হবিগঞ্জে আবারও অস্ত্রের ভাণ্ডার

হবিগঞ্জে আবারও অস্ত্রের ভাণ্ডার

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভারতের সীমান্তবর্তী সাতছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও আশপাশে আবারও অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। ২৯ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত চলমান অভিযানে সাতছড়ি বনাঞ্চলের টিলার বাঙ্কার/দুটি গর্ত থেকে নয়টি এসএমজি, একটি এসএমসি, একটি ব্যাটাগান, একটি ৭.৬২ মিমি অটোরাইফেল, ছয়টি এসএলআর, একটি ব্যাটাগান, একটি ৭.৬২ মিমি অটোরাইফেল, ছয়টি এসএলআর, একটি øাইপার টেলিস্কোপ সাইড এবং ২ হাজার ৪০০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব-৯-এর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব সদর দফতর সাতছড়ি বনে যৌথ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে র‌্যাব-৯-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান অভিযান এবং উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেন। র‌্যাব জানায়, এর আগে ৩ ও ৪ জুন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের টিলার বাঙ্কার/গর্তে অভিযান চালিয়ে চারটি ৭.৬২ মিমি এমজি, পাঁচটি এমজির অতিরিক্ত ব্যারেল, একটি ৪০ মিমি আরএল, ২২২টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কামানবিধ্বংসী রকেট, ২৪৮টি রকেটের চার্জ, ১১ হাজার ৫৮০ রাউন্ড ৭.৬২*৩৯ মিমি বুলেট, ২৮৪টি ১২.৭ মিমি মেশিনগানের বুলেট, ৪৪০ রাউন্ড ৭.৬২*৫৪ মিমি বুলেট, ১৯টি মেশিনগানের ড্রাম ম্যাগাজিন (চেনসহ) এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে চুনারুঘাট থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে সাতছড়ি বনে প্রাথমিকভাবে অভিযান স্থগিত করা হলেও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছিল র‌্যাব।
চুনারুঘাট থানায় করা মামলা দুটির তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র ভারতীয় বিচ্ছিন্নœতাবাদী সংগঠনগুলোরই। একই সঙ্গে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হওয়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দ্বিতীয় দফায় অস্ত্র ও গুলিগুলো কারা, কী কারণে এখানে মজুদ করেছে সে বিষয়ে জানাতে পারেনি র‌্যাব।
চুনারুঘাট থানা পুলিশ জানিয়েছে, এসব যুদ্ধাস্ত্র উদ্ধারের সময় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবদাদী গ্রূপের কিছু প্রচার-নথিপত্র পাওয়া যায়। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমেও প্রচারণা চলে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। শেষ না হলেও তদন্তের এ পর্যায়ে এসে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততা পাচ্ছে পুলিশ। ইতিমধ্যে এ সম্পর্কিত বেশকিছু তথ্য-উপাত্তও সংগ্রহ করেছেন তারা। বিশেষ করে ওই এলাকায় ’৯০-এর দশক থেকে অল ত্রিপুরা টাইগারস ফোর্সের (এপিটিএফ) ব্যাপক আধিপত্য তৈরি হয়। ২০০৬ সালেও তাদের নিজেদের দুই গ্রূপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এখন ওই অর্থে আধিপত্য না থাকলেও অস্ত্র মজুদসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে এপিটিএফসহ বেশকিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। র‌্যাবের অভিযানের আগেও ওই এলাকায় এপিটিএফের নেতৃত্বে ছিলেন আশীষ দেববর্মণ। চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অমূল্যকুমার বলেন, মামলার তদন্তের এ পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে অস্ত্রগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রূপের হতে পারে। তবে তদন্ত শেষেই চূড়ান্তভাবে সবকিছু বলা যাবে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, চলতি বছরের ৩ ও ৪ জুন সাতছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের টিলায় বেশ কয়েকটি বাঙ্কার থেকে ২২২টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কামানবিধ্বংসী রকেটসহ বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর পরও ওই এলাকায় র‌্যাবের অভিযান ও গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৯ ও র‌্যাব সদর দফতরের যৌথ উদ্যোগে ২৯ আগস্ট সাতছড়ির সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও আশপাশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গহিনের দুটি গর্তের ভিতর পলিথিনে মুড়িয়ে ড্রামে সংরক্ষণ করা ছিল অস্ত্রগুলো। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অস্ত্রগুলো পুরোপুরি সচল রয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অস্ত্রের উৎস ও ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অনুসন্ধান চলছে। এ ধরনের অস্ত্র সাধারণত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। দ্বিতীয় দফায় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। গতকাল সাতছড়ির গহিন অরণ্যে গিয়ে দেখা যায় আগের অভিযানস্থল থেকে আরও গহিনে দুটি বাঙ্কার। র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল টিম ও গোয়েন্দা ইউনিট ওই বাঙ্কার ঘিরে রেখেছে। স্থানীয় অধিবাসীদের সেখানে তেমন একটা দেখা যায়নি। আরও কী পরিমাণ অস্ত্র ওই এলাকায় আছে, কারা এসব নিয়ন্ত্রণ করে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে র‌্যাব।

সর্বশেষ খবর