বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রবৃদ্ধি অর্জনে নতুন মাত্রা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য আজ যে বাজেটটি প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সেখানে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য থাকতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের চালিকাশক্তি হিসেবে প্রথমবারের মতো প্রস্তাবিত বাজেটে ১০টি মেগা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বাজেটে মেগা প্রকল্পগুলোকে অভিহিত করা হচ্ছে, ‘কাঠামো রূপান্তরের বৃহৎ প্রকল্প : প্রবৃদ্ধি সঞ্চারে নতুন মাত্রা’ শিরোনামে।

সরকার মনে করছে, ৭ শতাংশের উপরে জিডিপি অর্জনের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দরকার মানব সম্পদের দক্ষতা বাড়ানো। এজন্য মেগা প্রকল্প  বাস্তবায়ন আর দক্ষতা উন্নয়ন— এ দুটি বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই দশমবারের মতো এবারের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সরকারের বর্ষীয়ান অর্থমন্ত্রী মুহিত। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত বাজেটে তিন বছর মেয়াদি (২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯) পরিকল্পনা থাকবে। এজন্য একটি পৃথক পথনকশা ঘোষণা করা হবে। ওই তিন বছরে মেগা প্রকল্পগুলোতে ২ লাখ ১২ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হতে পারে। আর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে ১৮ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার ৬২ কোটি টাকা। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৩৪ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে। ঢাকায় ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ জন্য আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৪০ কোটি টাকা। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন রামপাল মৈত্রী সুপার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে ২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে এ প্রকল্পে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। কক্সবাজার-গুনদুম রেল প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা, নতুন বাজেটে বরাদ্দ থাকতে পারে ৬৩১ কোটি টাকা। প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হতে পারে ৬১৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬০০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা-যশোর রেললিঙ্ক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। পায়রা সমুদ্রবন্দরে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। এছাড়া সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর ও এলএনজি টার্মিনাল নামে আরও দুটি মেগা প্রকল্প রয়েছে সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায়। তবে ওই দুটি প্রকল্পের অর্থায়ন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। একই সময়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে প্রথম পর্যায়ের রেললাইন তৈরির কাজও শেষ হবে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প আগামী বছর চালু হবে বলে আশা করছে সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। বছর শেষে যা ৭ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে শিল্প খাতের উৎপাদন বাড়বে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচকেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সামগ্রিক বিনিয়োগও বাড়ছে, তবে সেটি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নয়। এক্ষেত্রে আমরা মনে করছি, বেসরকারি বিনিয়োগে কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সে কারণে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে সেই ঘাটতি পূরণ করা হবে। এছাড়া বিদ্যমান বিনিয়োগ যা আছে সেখান থেকে মূলধনী দক্ষতা (ক্যাপিটাল এফিসিয়েন্সি) বাড়িয়ে কীভাবে আরও বেশি সুফল পাওয়া যায় সে দিকে লক্ষ্য থাকবে সরকারের। মানব সম্পদ বিশেষ করে শ্রম খাতের দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়াস থাকছে। এজন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও মেশিনারিজ দক্ষতা বাড়ানোরও প্রয়াস থাকবে প্রস্তাবিত বাজেটে।

সর্বশেষ খবর