স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগে ভ্রান্ত বাম প্রবেশ করেছে। দলে ও সরকারে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব খুবই কম। তাদের চিন্তা-চেতনায় আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে। তারা আজ আওয়ামী লীগকে গ্রাস করে ফেলছে। মনে হয় এটি যেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু মুজিবের আওয়ামী লীগ নয়। গুলশানে তার বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নূরে আলম সিদ্দিকী আরও বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। দলের প্রতিষ্ঠাতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজগার্ডেনে গঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আর সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। তারই যোগ্য উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের ‘মুজিবভাই’ গণতান্ত্রিক পথেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অবিশ্রান্ত প্রচেষ্টায় মানুষের হৃদয়ের সিংহাসনে ‘মুকুটহীন সম্রাট’ হয়ে উঠেন। নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, সংগঠনের মূল শক্তি গণতন্ত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্ষজুড়ে ছিল গণতান্ত্রিক চেতনা। আমি বঙ্গবন্ধুর চেতনার উত্তরাধিকার। আমি চাই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে গণতান্ত্রিক চেতনায় নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে এমন একটি নেতৃত্ব গড়ে উঠুক, যে নেতৃত্ব হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিছু পাওয়ার জন্য রাজনীতি করেননি। তারা দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করেছেন। এখন রাজনীতিকরা যে কোনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে কমিশন নেন। আজকের রাজনীতিকদের উদ্দেশ্য হলো পদ-পদবি নিয়ে নিজের ভাগ্যের উন্নতি। নতুন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে এই অসহনীয় দুঃসহ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি আজ সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। দুর্নীতি রাতারাতি নির্মূল করা না গেলেও নির্মূলকরণ শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী অভিজ্ঞ রাজনীতিক; কারা দুর্নীতিবাজ তিনি জানেন। তাদের দল থেকে বাদ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তেজস্বী এই নেতা বলেন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাট করে মানুষের জনসমর্থন আদায় করা সম্ভব নয়। এ সম্মেলনে জোরালো স্লোগান হওয়া উচিত— ‘আসুন আমরা বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করি। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত করি। আমরা নতুন নেতৃত্বের এমন চেহারা নিয়ে আসি যারা আওয়ামী লীগের মতো দলের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের বিকৃত লালসাকে চরিতার্থ করবে না। যারা সম্পদের পাহাড় গড়ছে তাদের পরিহার করি।’ তিনি বলেন, আশা করি শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখবেন। দুর্নীতির রাঘববোয়ালরা দলে যত প্রভাবশালীই হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তাদের যোগ্য শাস্তি দেবেন। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হলে দুর্নীতি কমে যেত। তিনি বলেন, সেদিনও যারা আমার প্রাণের মুজিবভাইকে ‘সিআইএ’র দালাল’ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর হাড্ডি দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছে তারা আজ আওয়ামী লীগের হোমরা-চোমরা। তারা আজ আওয়ামী লীগ দখল করে আছে। মনে হয় তারাই যেন দলটির কর্ণধার। আওয়ামী লীগে কখনো বিপর্যয় এলে এরা শেখ হাসিনার কাছ থেকে উড়ে যাবে। তিনি টেরও পাবেন না। আমি আশা করব কমিউনিস্ট আওয়ামী লীগের পরিবর্তে যেন বঙ্গবন্ধু মুজিবের আওয়ামী লীগ হয়। তিনি বলেন, উপমহাদেশে ভারতের কংগ্রেসের পর আওয়ামী লীগ বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন— এটা ইতিহাস স্বীকৃত। এই সংগঠন এ দেশের জাতীয় চেতনা, মানুষের মৌলিক অধিকার, মানুষের মননশীলতা, সংস্কৃতি, সাহিত্য সবকিছু লালন করে। এই সংগঠন আন্দোলনের দীর্ঘ পথপরিক্রমণের মধ্য দিয়ে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অকুতোভয় নেতৃত্বে স্বাধীনতা সূর্য ছিনিয়ে আনে। বঙ্গবন্ধুর সতীর্থ এবং স্বপ্নের কারিগর ছিল ছাত্রলীগ। নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগের নিষ্ঠাবান নেতা রয়েছে। তারা আজ নিরাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত। যারা বুকের রক্ত দিয়ে পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ করেছিল তাদের অনেকেই আজ দল ও সরকার থেকে উপেক্ষিত। আওয়ামী লীগকে যারা দুর্নীতিমুক্ত করতে পারবে এবং গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করতে পারবে তাদেরই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হাল ধরা উচিত। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে যারা দুর্নীতিমুক্ত, যারা গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে পারবে তাদের দলে আনতে হবে। তিনি বলেন, বিগত সম্মেলনগুলোয় দেখা গেছে, শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটির বাকি নাম পরে ঘোষণা করা হয়েছে। আমি আশা করব আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এবার তার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন। দুর্নীতিগ্রস্ত, ভ্রান্ত বাম এবং সুবিধাবাদীদের নিয়ে দল গঠন করলে দলের ভিতরে প্রতিবাদ আসবে। দলের সঙ্গে এবং তৃণমূলে মাটির সঙ্গে যাদের পরিচিতি নেই তাদের দলে টানা ঠিক হবে না। যারা মনে করেন দক্ষতা না থাকলেও হাসিনা বন্দনা করলে পদ-পদবি পাওয়া যাবে তাদের দিয়ে দলের কিছু হবে না। হাইব্রিড নেতা যারা কর্মীদের কাছে অপরিচিত তাদের দলে টানলে সংগঠন শক্তিশালী হবে না। যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের দুর্নীতিকে ‘না’ বলতে হবে।
শিরোনাম
- শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে রিয়াল
- টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭
- নয়জনের দল নিয়েই বায়ার্নকে হারিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
- মিশরে দুই মিনিবাসের সংঘর্ষে ৯ জন নিহত, আহত ১১
- তানভীরের জবাব: ক্যাপ্টেনের ভরসাই আত্মবিশ্বাসের চাবিকাঠি
- করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন জনপ্রিয় অভিনেতা কেনেথ কলি
- সকালের মধ্যে সাত জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের সম্ভাবনা
- ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে: আমিনুল
- ইমন-হৃদয়-তানভীরের ত্রয়ী দাপট কলম্বোতে
- শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ
- মান্না ছিলেন বাংলাদেশের জেমস বন্ড: জাহিদ হাসান
- জ্ঞানীরা পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায় : ফয়জুল করিম
- পাহাড়ি ফল ঐতিহ্যের অংশ : উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা
- পল্লী বিদ্যুতের সাব-যোনাল অফিস স্থানান্তরের প্রতিবাদে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ
- প্রবাসী ভাইয়ের লাশ আনতে গিয়ে প্রাণ গেল দুই ভাইয়ের
- নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে : নার্গিস বেগম
- বিচার ও সংস্কারের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হবে : নাহিদ
- চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের আনন্দ মিছিল
- উত্তাল বঙ্গোপসাগরে আশ্রয় নিল শত শত ট্রলার, চার বন্দরে সতর্কতা
- বিএনপি নামলে নির্বাচন পেছানোর সাহস কারো নেই : গয়েশ্বর
আওয়ামী লীগে রাজনীতি করছে ভ্রান্ত বামরা
বাদল নূর
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর