সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জে নৌকার গণজোয়ার দেখছেন কাজী জাফরউল্লাহ

রফিকুল ইসলাম রনি

নারায়ণগঞ্জে নৌকার গণজোয়ার দেখছেন কাজী জাফরউল্লাহ

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কাজী জাফরউল্লাহ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সব ভেদাভেদ ভুলে দলীয় নেতা-কর্মীরাও এখন ঐক্যবদ্ধ। প্রচার-প্রচারণায় নৌকার পক্ষে প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই মানুষের ঢল নামছে। আগামী ২২ তারিখে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বিজয় নৌকারই হবে। গতকাল দুপুরে তার বনানী অফিসে বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা এবং সার্বিক বিষয় তদারকি করতে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের টানা চারবারের প্রেসিডিয়ামে স্থান পাওয়া এই প্রবীণ নেতাকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের ১৩টি টিমে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়াম লীগ নেতাদের সঙ্গে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে দুই দফা বৈঠকও করেছেন তিনি। এ ছাড়াও গতকাল দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই নির্বাচনী এলাকায় ছিলেন। ‘নৌকা শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যাবে’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ভুল রাজনীতিতে হতাশাগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য বিএনপির নেতারা এমন কথাবার্তা বলছেন। আমাদের রাজনীতি হচ্ছে জনগণের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য। অন্যদিকে বিএনপির রাজনীতি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, নিরীহ মানুষ হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসের রাজনীতি। দেশের মানুষ অনেক আগেই বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তাই হবে। তিনি বলেন, আমরা ভোটের জন্য রাজনীতি করি না। মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে ১০ টাকা কেজিতে চাল দিচ্ছেন। গৃহহীন মানুষের গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছেন। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম করে চলেছেন। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব উন্নয়নের রোল মডেল। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল—সেসব ভুলে গিয়ে সবাই নৌকার জন্য ঐক্যবদ্ধ। আমাদের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ১৪ বছর নগরবাসীর উন্নয়ন করেছেন। সবার পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিজয় নৌকারই হবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লাহের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল—কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারের কারণে বিজয় হয়নি। নারায়ণগঞ্জে সিটি নির্বাচনে আইভীরও তেমন জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে—পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনা কি দেখছেন? জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক বলেন, গাজীপুরে আমরা অতি বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। যে কারণে বিএনপি-জামায়াত অপপ্রচার চালিয়ে ফসল ঘরে তুলেছিল। এ নির্বাচনে সে সুযোগ আমি দেখছি না। তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, গাজীপুরের মতোই নারায়ণগঞ্জে তারা (বিএনপি-জামায়াত) বিশেষ করে মহিলারা নিকাব (বোরকা-চোখ ছাড়া কিছু দেখা যায় না) পরে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে এবং নানাভাবে মগজ ধোলাই করার চেষ্টা করছে। তবে এখন মানুষ আগের চেয়ে বেশি সচেতন, এতে কাজ হবে না। নারায়ণগঞ্জে শামীম-আইভীর দ্বন্দ্বের কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসছে—এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, দ্বন্দ্ব ছিল এটা বলতে চাই না। তবে ভুল বোঝাবুজি বা দূরত্ব ছিল। সেটা এখন নেই। গত কয়েকদিন আগে আমি নিজে মহানগর ও জেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করি। সর্বশেষ শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দোয়া চেয়েছেন। তিনি ঘরোয়া বৈঠকে নেতা-কর্মীদের নৌকার পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। আগে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় স্থানীয় শীর্ষ নেতারা না থাকলেও এখন তারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোট প্রার্থনা করছেন। আইভী-শামীম দ্বন্দ্ব নিয়ে গণমাধ্যমে বর্তমানে অতি রঞ্জিত সংবাদ আসছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দুটি ওয়ার্ডে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন। তারা নিজেরা ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি দেখভাল করছেন স্থানীয় নেতাদের কর্মকাণ্ড। যেখানে কোনো সংকট বা সমন্বয়হীনতা থাকছে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং দ্রুত সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আগামী কয়েকদিনে ২৭টি ওয়ার্ডেই তিনি প্রচারণায় অংশ নেবেন বলেও জানান। সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, নির্বাচনের শতভাগ সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। তাদের প্রার্থী এবং কর্মী-সমর্থকরা নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। তাহলে কেন সেনাবাহিনী প্রয়োজন? নাকি নির্বাচনকে বিতর্কিত করতেই সেনা চাওয়া হচ্ছে? তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট হবে। এতে যদি আমাদের দলের প্রার্থীও হেরে যায় আমরা মেনে নেব।

সর্বশেষ খবর