বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
আ - মরি বাংলা ভাষা

সর্বস্তরে ব্যবহার করতে হবে বাংলা

সেলিনা হোসেন

সর্বস্তরে ব্যবহার করতে হবে বাংলা

মাতৃভাষার জন্য লড়াই করা জাতি হিসেবে পৃথিবীতে আমাদের পরিচয়। আমাদের এই  অর্জন নিয়ে আজও বিশ্বব্যাপী আমরা প্রচার করতে পারিনি। কেবল  বাংলা ভাষা নয় এ দেশের ক্ষুদ্র জনজাতির ভাষাসমূহ নিয়ে আমরা উল্লেখযোগ্য তৎপরতা চালাতে পারিনি। তাছাড়া ভাষা হলো চর্চার বিষয়। কিন্তু শুদ্ধ চর্চার অভাবে আমাদের মাতৃভাষা দিনে দিনে বেহাল হয়ে পড়ছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাতৃভাষা ব্যবহারে কোনো পরিমিতি লক্ষ্য করা যায় না। অন্যদিকে এফএম রেডিওগুলো বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ইত্যাদি মিশিয়ে পাঁচমিশালি ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করছে। রিকশাওয়ালা, ড্রাইভার থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সবাই এসব অনুষ্ঠানের শ্রোতা। সুতরাং তারা ঘরের বাইরে এবং পরিবারেও পাঁচমিশালি ভাষা চর্চা করে থাকে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। মাতৃভাষা প্রীতির মাধ্যমে তরুণরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়। বাংলা ভাষার এই যত্রতত্র ব্যবহার ভবিষ্যতে আমরা দারুণ ক্ষতির শিকার হব। ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করায় বিশ্বব্যাপী এ দিবস পালিত হয়। এ জন্য এ দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী প্রচারের দায়িত্ব আমাদের। আজও বাংলাদেশের উচ্চ আদালত, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাতৃভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি। বাংলা একাডেমি নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যগ্রন্থ প্রকাশ করছে। এ বিষয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। নতুন গবেষণা করা প্রয়োজন। একুশের চেতনাকে ধরে রাখতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষার মর্যাদার মাধ্যমে দেশপ্রেম প্রতিষ্ঠা পাবে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলা ভাষায় রচিত গুরুত্বপূর্ণ রচনাসমূহ অনুবাদ করে বিশ্বব্যাপী প্রচার করতে হবে। তা না হলে ভিন্নভাষী জনগোষ্ঠী আমাদের আন্দোলন, সংগ্রাম, ভাষা, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে না। অন্যরা যদি বিষয়টি না জানে তাহলে কীভাবে তাদের চর্চার মধ্যে আনবে। এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করে গবেষণা, গ্রন্থ প্রণয়ন করা প্রয়োজন। জাতিসংঘ বাংলাদেশের প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছে। এ জন্য এ দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে জানানোর দায়িত্ব আমাদের। বিভিন্ন পোস্টার, লিফলেট, বুকলেট, বই, পত্র-পত্রিকাসহ তথ্যচিত্র নির্মাণ করা যেতে পারে। এগুলো বহির্বিশ্বে আমাদের দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে প্রচার করতে হবে। বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, ভাষা ইনস্টিটিউটগুলোতে সেগুলো পাঠাতে হবে। কিন্তু আজও আমাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাংলা ভাষার দৈন্যতা নেই। দৈন্যতা আমাদের। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে হবে। পরবর্তী সময়ে সেটা হয়নি। কেউ আমাদের সংগঠিত করেনি। আজও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন সম্ভব হয়নি। আদালতে ইংরেজিতে রায় দেওয়া হচ্ছে। আমার প্রশ্ন একজন কৃষক, দিনমজুর কেন ইংরেজি ভাষায় রায় পাবে। বাংলা একাডেমি বেশ সফলভাবে বাংলা ভাষায় কিছু একাডেমিক পাঠ্যবই প্রকাশ করেছে। এই মুহূর্তে আমাদের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষা রক্ষায় মনোযোগ দিতে হবে। লেখক : কথাশিল্পী

সর্বশেষ খবর