জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের প্রায় দুই বছর বাকি থাকলেও এখন থেকেই প্রার্থীর সন্ধান করা হচ্ছে। দিবসভিত্তিক কর্মসূচির গণ্ডি থেকে বেরিয়ে নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তৃণমূলে। তৈরি করা হচ্ছে নির্বাচনী কৌশল। আগামী মাসে শুরু হবে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ। এর প্রস্তুতি হিসেবে বিগত নির্বাচনী ইশতেহারগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সর্বস্তরের মানুষকে। দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনায় আলাদা একটি কার্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ের পাশে আলাদা একটি ভবনে নির্বাচনী সব কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণ করা হবে। দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সংগতি রেখে ইশতেহার তৈরি করা হবে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচারে গুরুত্ব দিয়ে চলছে জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর। মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দলীয় নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের ভুলভ্রান্তি শোধরাতে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। অপরাধে জড়ালেই সাংগঠনিক ও আইনি শাস্তির মুখোমুখি করা হচ্ছে। এদিকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নড়েচড়ে বসেছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। সামাজিক কর্মকাণ্ডেও বেড়েছে তাদের তৎপরতা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন নানাভাবে। নির্বাচন প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। প্রার্থীদের বিষয়ে আগাম তথ্য সংগ্রহের কাজও চলছে আওয়ামী লীগে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে প্রার্থীদের একটি সম্ভাব্য খসড়া তালিকা করা হবে নির্বাচনের আগেই। স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থী বাছাইয়ে আগে থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। দলের নির্বাচন পরিচালনা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জানিয়েছেন, ‘দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে এখন দল গোছানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’ সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়েছেন। গত মাসে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন। জেলায় বর্ধিত সভা, কর্মিসভা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মী সম্মেলন করা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচন ও প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রী মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিচ্ছেন। তিন মাস পরপর মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের তথ্য নিচ্ছেন। ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। আমিও যে মনোনয়ন পাব, তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দলের জাতীয় সম্মেলনে অনুমোদন নেওয়া গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রিন্টে যাচ্ছে। ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের আলোকে দলের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যেই নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক প্রার্থীদের কর্মকাণ্ডের ওপর জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। চলছে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ। প্রতিটি আসনে জনপ্রিয়তা যাচাই করে একাধিক প্রার্থীর নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। বর্তমান এমপিদের মধ্যে কারা নিজ এলাকামুখী, কারা জনবিচ্ছিন্ন সে বিষয়গুলোও উঠে আসছে জরিপে। কোনো এমপি স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি করছেন কিনা কিংবা কেউ হাইব্রিড নেতার খপ্পরে পড়েছেন দেখা হচ্ছে সেগুলোও। এসব প্রতিবেদন মূল্যায়ন করেই প্রার্থী বাছাই করবে দলীয় হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা জেলায় জেলায় কর্মিসভা করছি। আগামীতে বিভাগীয় প্রতিনিধিসভা হবে। এসব সভায় সরকারের টানা আট বছরের উন্নয়নচিত্র এবং ভবিষ্যতে আরও কী কী করা হবে সেগুলো তুলে ধরছি। এটা আমাদের রুটিনওয়ার্ক। সারা বছরই আমাদের এ-সংক্রান্ত কাজ চলে।’ রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নেত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা-উপজেলা এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়-কর্মিসভা করছি। আমাদের লক্ষ্য সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মানুষকে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করা। সরকারের উন্নয়গুলো জনগণের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া।’