রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
পদ্মা সেতু প্রকল্প

দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে এ-সংক্রান্ত মামলা থেকে খালাস দিয়েছে টরন্টোর একটি আদালত। গতকাল এ আদেশ দেওয়া হয়। এ মামলার তথ্য-প্রমাণ হিসেবে টেলিফোনে আড়ি পেতে পাওয়া যেসব প্রমাণ দাখিল করা হয়েছিল, সেগুলো নাকচ করে দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) তদন্ত কার্যক্রমের সমালোচনা করা হয়েছে। কানাডার টরন্টো স্টার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে গতকাল এ খবর দেওয়া হয়েছে। খালাস পাওয়া সাবেক ওই তিন কর্মকর্তা হলেন কেভিন ওয়ালেস, রমেশ শাহ ও জুলফিকার আলী ভূঁইয়া। তাদের মধ্যে কেভিন এসএনসি-লাভালিনের জ্বালানি ও অবকাঠামো বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ছিলেন। রমেশ ছিলেন আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট। জুলফিকার বাংলাদেশ-কানাডার দ্বৈত নাগরিক। তারা তিনজনই বাংলাদেশে কাজ পেতে এ দেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আরসিএমপির এক কর্মকর্তা ২০১১ সালে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় দাবি করেছিলেন, তারা আড়ি পেতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত যোগাযোগের কথোপকথন উদ্ধার করেছেন। গতকালের আদেশে বিচারক লেখেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল, ‘তা জল্পনা, গুজব আর জনশ্রুতি ছাড়া কিছুই না।’ মামলার রায়ে খালাসপ্রাপ্তরা তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

আদালতের এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের ঢাকার আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফানের বরাত দিয়ে সংস্থার ওয়েবসাইটে গতকাল একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বিশ্বব্যাংক তার অর্থায়িত প্রকল্পে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে থাকে। যখন বিশ্বব্যাংকের একটি তদন্ত শেষ হয়, তখন সেই তদন্তের অনুসন্ধান পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট দেশকে, যেন তারা বিবেচনায় নিতে পারে এর মধ্য দিয়ে তাদের জাতীয় আইন ক্ষুণ্ন হয়েছে কিনা। পরবর্তী সময়ে সেই সংশ্লিষ্ট দেশের পর্যবেক্ষণ বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত পর্যবেক্ষণ সেই দেশকেই দেওয়া হয়।’

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের সব উন্নয়ন প্রকল্পে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ-ঘোষিত কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকেও মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। প্রসঙ্গত, ওই দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে টানাপড়েনে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল হয়ে যায়। সে সময় পদ্মা সেতু দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পদত্যাগ করেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। সরিয়ে দেওয়া হয় সে সময়ের সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকেও। পরে নিজস্ব অর্থায়নে বৃহৎ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে হাত দেয় বাংলাদেশ সরকার, যা এখন এগিয়ে চলছে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা করে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে দুদকের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এদিকে গতকাল ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় উল্লেখ করেন, ‘কানাডার একটি আদালত পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের হওয়া মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফের প্রমাণিত হলো পদ্মা সেতুতে যে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছিল, তা কেবলই গালগল্প ও গুজব ছিল।’

সর্বশেষ খবর