মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য খাতে উচ্চ ব্যয় একচেটিয়া ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্য খাতে উচ্চ ব্যয় একচেটিয়া ব্যবসা

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যয় অনেক উচ্চ। ওষুধের মূল্যও অনেক বেশি। এ ছাড়া এ খাতে সেবা দেওয়ার নামে অনেকেই বেশুমার ব্যবসা করছেন। নিরাপদ, কার্যকর ও কমমূল্যের ওষুধ সরবরাহ করে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে না পারলে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন। এ জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত ত্রিবার্ষিক বক্তৃতামালায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। স্বাস্থ্য এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা শীর্ষক এই বক্তৃতামালায় প্রধান বক্তা ছিলেন জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির ভাইস চেয়ারমান নিউইয়র্কের নিউ স্কুলের অধ্যাপক সাকিকো ফুকুদা পার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। দর্শক সারিতে উপস্থিত থেকে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদ, কূটনৈতিক, সাবেক আমলা, বিদেশি বিশেষজ্ঞ, ইউএসএইড, সেইভ দ্য চিলড্রেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ব্র্যাক, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা।

সাকিকো ফুকুদা পার বলেন, কমমূল্যে গুণগতমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জিত হবে না। নতুন বাণিজ্য চুক্তি থাকার পরও বিশ্বব্যাপী ওষুধের মূল্য আকাশচুম্বী হচ্ছে। জটিল রোগ চিকিৎসায় বা অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবন না থাকায় বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে দুনিয়াব্যাপী লাখ লাখ মানুষ বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের মানুষ ওষুধ পাচ্ছে না। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে সারা বিশ্বে ৮১ হাজার মানুষ মারা গেছে শুধু যক্ষ্মারোগে। এ ছাড়া মরণব্যাধি এইচআইভি রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে নতুন কোনো ওষুধ আবিষ্কার করা যায়নি। এ ছাড়া এ রোগের একটি ওষুধের উৎপাদন খরচ ১ ডলার আর সেই ওষুধ বিক্রি করা হয় এক হাজার ডলারে। ফলে এ ধরনের মরণব্যাধি থেকে রোগীদের আরোগ্য দেওয়া সম্ভব হয় না। এ বিষয়ে আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন। নতুন নতুন উদ্ভাবন প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুত খাত দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। গুণগতমানসম্পন্ন ওষুধ তৈরি করে নিজেদের চাহিদা শতভাগ মিটিয়ে রপ্তানি করছে। এটা খুবই ইতিবাচক। সাকিকো তার উপস্থাপনায় বৈশ্বিক স্বাস্থ্যচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের কিছু তথ্য তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। তিনি জানান, গত ৪০ বছরে যক্ষ্মার চিকিৎসায় নতুন যে দুটি ওষুধ উদ্ভাবিত হয়েছে তা এখন বাংলাদেশে ব্যবহূত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। মূল বক্তা অধ্যাপক সাকিকো ফুকুদা পারকে পরিচয় করিয়ে দেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এতে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ২২ জন। আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশ ওষুধ খাতে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওষুধের দাম কমছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে। বিশেষ করে প্রাণরক্ষাকারী ওষুধের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়। এতে কোনো কোনো কোম্পানি একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে কোথায় সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে না বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। পরে বক্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ফুকুদা এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মে. জে. মোস্তাফিজুর রহমান।

সর্বশেষ খবর