সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
বগুড়ায় বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

শান্তি ও উন্নয়ন রাখতে আওয়ামী লীগকে পুনর্নির্বাচিত করুন

রফিকুল ইসলাম রনি ও আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া থেকে

শান্তি ও উন্নয়ন রাখতে আওয়ামী লীগকে পুনর্নির্বাচিত করুন

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। বিএনপি এলে উন্নয়ন থেমে যাবে।

গতকাল বিকালে বগুড়ার সান্তাহারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। দেশের অন্যতম রেল জংশন সান্তাহারে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী জনসভা করলেন। জনসভায় বগুড়া ছাড়াও পাশের নওগাঁ, জয়পুরহাট, নাটোর থেকে জনস্রোত নেমেছিল। দলীয় প্রতীক নৌকা, রংবেরঙের ক্যাপ ও পোশাক গায়ে জড়িয়ে, ব্যানার, নানা বাদ্যযন্ত্র ও গ্রামীণ বিভিন্ন ঐতিহ্য ফুটিয়ে নেচে-গেয়ে নেতা-কর্মীরা জনসভায় যোগ দেন। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো সান্তাহার। দুপুর ২টায় জনসভা শুরুর কথা থাকলেও ১টার মধ্যে স্টেডিয়াম মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ ছাড়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনেন। গোটা সান্তাহার যেন জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছিল। জনসভা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মাইক লাগানো হয়। এ ছাড়া বগুড়া থেকে সান্তাহার পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তা রংবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও সুসজ্জিত তোরণে ছেয়ে যায়। শহরজুড়েই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে এসে পৌঁছান। এরপর তিনি সান্তাহারের সাইলো ক্যাম্পাসে নির্মিত দেশের প্রথম বহুতল ওয়্যারহাউস উদ্বোধন করেন। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় ওয়্যারহাউস। আধুনিক খাদ্য গুদাম প্রকল্পও পরিদর্শন করেন তিনি। সাইলোর রেস্ট হাউসে দুপুরের খাবার সারেন প্রধানমন্ত্রী। বগুড়ার ঐতিহ্যমণ্ডিত নানা পদের খাবার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে আপ্যায়ন করা হয়। শেখ হাসিনা জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘যদি আপনারা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান, দারিদ্র্য হ্রাস করতে চান, বিনা পয়সায় বই চান, প্রত্যেক মানুষের জন্য ঘর চান, কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা চান, তাহলে ২০১৯ সালের নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে জনগণ কিছু পায়। নইলে বঞ্চিত হতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি বাবা-মা সবাইকে হারিয়ে আপনাদের মাঝে আমার বাবা-মা, ভাইদের খুঁজে পাই। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে আসিনি। মানুষের সেবা করতে এসেছি। আমার একটাই চিন্তা— বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধানের শীষ ক্ষমতায় এলে ধানে চিটা ধরে যায়। খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। লুটপাট, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা বিরাট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।’ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে কখনো মানুষ ঠকেনি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েই এ দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় যখনই মানুষ ভোট দিয়েছে, তখনই এ দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। নৌকায় ভোট দেওয়ায় আজ মানুষের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে। নৌকায় ভোট দেওয়ায় মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে।

নৌকায় ভোট না দিলে কী হবে তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, লুটেরা, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদী, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে দেশের কোনো উন্নয়ন হবে না। সবকিছুই থেমে যাবে। তারা নিজেরাই খাবে, কাউকে দেবে না। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসা মানে সবাইকেই দেবে। সবার জন্য কাজ করবে। প্রত্যেকের জীবন সুন্দর হবে, উন্নত হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনে নাশকতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তারা আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। আমরা রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। তারা রাস্তাঘাট কেটেছে। আমরা গাছ লাগিয়েছি। তারা গাছ কেটেছে। মানুষের ওপর অত্যাচার, গাছের ওপর অত্যাচার, কেবল অত্যাচারই তারা জানে।’ তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্য ৪৭ ভাগ থেকে কমিয়ে ২২ ভাগে এনেছি। আমাদের লক্ষ্য এটা ১৫ ভাগে কমিয়ে আনা। আমরা চাই একটি মানুষও গরিব থাকবে না। গৃহহারা-নদীভাঙা প্রত্যেকটা মানুষ ঘর পাবে। তাদের জন্য ঘর করে দিচ্ছি, আদর্শ গ্রাম করে দিচ্ছি। প্রতিটি ছেলেমেয়েকে বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। যদি চান এসব অব্যাহত থাকুক; তাহলে আমি এটাই বলব, আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন; যাতে আমরা পুনরায় আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার মাটিতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান হবে না। আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ভ্রাতৃত্বের ধর্ম, সৌহার্দ্যের ধর্ম। ইসলাম মানুষ খুন করার কথা বলে না। কাজেই এই দেশে যাতে জঙ্গিবাদের স্থান না হয় সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা যেন একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশে উন্নয়ন কার্যক্রম করতে পারি।’ তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে (মডেল) মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করে দেব। মসজিদের নকশা আমরা দেখেছি। কাজও দ্রুত শুরু করব।’ তিনি বলেন, ‘যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন তখন বাজেটের সময় গোপালগঞ্জের টাকা কেটে নিতেন। এক ফোঁটাও উন্নয়ন করেননি। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ করি জনগণের জন্য। কোন এলাকা তা দেখি না। সব এলাকায় আমরা সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। যে কারণে বগুড়ায় যে উন্নয়ন হয়েছে সবই তো আওয়ামী লীগ আমলে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। যেসব উপজেলায় সরকারি স্কুল-কলেজ নেই, সেখানে তা করে দেব।’ তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘কেউ বেকার থাকবে না। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। সেখানে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে উদ্যোক্তা। আর তাদের ঘিরে আরও বহু মানুষ কাজ করতে পারছে।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামে বসে শুধু দেশে নয়, বিদেশেও যাতে পয়সা কামাই করতে পারেন, আউটসোর্সিং করতে পারেন, সেজন্য আমরা লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং অর্থাৎ আপনি শিখবেন এবং পয়সা কামাই করবেন— এ ধরনের ট্রেনিং দিচ্ছি। বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল। প্রতিটি জায়গায় আপনারা ইন্টারনেট সার্ভিস পাচ্ছেন। ঘরে বসে বিশ্বকে জানতে পারছেন। প্রবাসীকে দেখতে পাচ্ছেন। জিনিসপত্র কিনতে পারছেন। সে সুযোগ করে দিচ্ছি আমরা।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। বগুড়ায়ও জায়গা দেখেছি। এখানে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে উঠবে। মানুষের যেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, তেমনি আর্থিক সচ্ছলতা আসবে।’ স্থানীয় দাবিসমূহ পূরণেরও আশ্বাস দেন তিনি।

আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনছার আলী মৃধার সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, আবদুল মান্নান এমপি, হাবিবুর রহমান এমপি, মুজিবুর রহমান মজনু, আবদুল মালেক এমপি, পঙ্কজ দেবনাথ, খন্দকার শামসুল আলম, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম খান রাজু সভা পরিচালনা করেন।

সর্বশেষ খবর