মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্লু হোয়েল নিয়ে অ্যালার্ট

জিন্নাতুন নূর

ব্লু হোয়েল নিয়ে অ্যালার্ট

বাংলাদেশে ব্লু হোয়েল নামক গেম আছে, কি নেই তা নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে তখন সতর্ক অবস্থান নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সতর্কতা জারি করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগও। সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বাংলাদেশ      টেলিকমিউনিকেশস রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। আর সমাজবিজ্ঞানী ও কম্পিউটার প্রকৌশলীরা অভিভাবকদের উদ্দেশে বলছেন, সন্তানদের আরও বেশি পরিমাণে সময় দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ব্যবহৃত কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের কনটেন্ট নজরদারি আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে হলিক্রস স্কুলের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা ‘ব্ল হোয়েল’ নামক একটি ইন্টারনেটভিত্তিক গেম খেলে আত্মহত্যা করেনি বলে গতকাল স্বর্ণার পিসি কেয়া চৌধুরী জুঁই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথমে স্বর্ণা এই গেমটি খেলছে বলে সন্দেহ করলেও পরে এটি সত্য নয় বলে কেয়া তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন। যদিও এর আগে স্বর্ণার বাবা অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্ধন গণমাধ্যমের কাছে তার মেয়ে এই গেমটি খেলেছিল বলে জানিয়েছিলেন। একদিকে এই গেমটি খেলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমানে সতর্কতামূলক নানা পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। অন্যদিকে এই গেমটি খেলার জন্য দেশের বাইরের একটি নম্বর থেকে ফোন আসা নিয়েও গতকাল দিনভর নানা আলোচনা চলে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত কম্পিউটার প্রকৌশলীরাও। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সাংবাদিকদের তার মন্ত্রণালয়ে বলেন, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদকে বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বর্ণা এই গেমটি খেলে আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়েছিল কিনা এবং বাংলাদেশে এ খেলা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বিটিআরসিকে বলা হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগও তাদের ফেসবুক পেজে ব্লু হোয়েল গেম নিয়ে সতর্ক করে বলেছে যে, অনলাইনে ব্লু হোয়েল গেম খেলা বা এই গেমের লিংক দেওয়া-নেওয়া বা এ ধরনের চেষ্টা দণ্ডনীয়। যারা এগুলোর কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে সাইবার পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সতর্কতা হিসেবে বলা হয়েছে, সন্তানদের ব্যক্তিগত মোবাইল ব্যবহার করতে দিলে সে মোবাইলে তারা কি করছে তা লক্ষ্য রাখা, সন্তান বেশি সময় ধরে একা লুকিয়ে মোবাইল ব্যবহার করছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা, প্রয়োজনে সন্তানের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা, হাতে-পায়ে শরীরে কোনো কাটা দাগ দেখলে এ নিয়ে দেরি না করে আলোচনা করা। সন্দেহ হলেই তাদের বুঝিয়ে মোবাইল কেড়ে নেওয়া। কৌতূহল সত্ত্বেও কেউ এই গেম যাতে ইনস্টল করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। আর সন্তানদের বেশি সময় দেওয়া, গল্পের বই পড়তে দেওয়া, খেলার মাঠে নিয়ে যাওয়া এবং পারিবারিকভাবে সুস্থ বিনোদনের আয়োজন করার ওপরও তারা গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে যদি এই ধরনের ভয়ঙ্কর কোনো গেম থেকে থাকে তবে তা অতি শিগগিরই বন্ধ করে দিতে হবে। ব্লু হোয়েল তো বটেই এমনকি এই গেমের মতো একই ধরনের আরও কোনো গেম আছে কিনা তারও নজরদারি করা প্রয়োজন। এজন্য সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিটিআরসির নজরদারির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেটে গেটওয়ে হয়ে যে বিষয়গুলো এনক্রিপশন হয়ে আসে সেগুলো অনেক সময় সংশ্লিষ্টদের পক্ষে বের করা সম্ভব নয়। অবশ্যই কিছুক্ষেত্রে এগুলোর কোড বের করা সম্ভব। আমাদের বুঝতে হবে যেসব ছেলেমেয়ের বন্ধু কম এবং যারা কিছুটা বিষণ্ন তারা অন্যের মনোযোগ পাওয়ার জন্য এ ধরনের গেমে আসক্ত হয়ে যেতে পারে। এজন্য অভিভাবকদের সন্তানদের সময় দিতে হবে এবং তাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন সাদেকা হালিম বলেন, এই ভয়ংকর খেলাটি নিয়ে সূক্ষ্ম তদন্ত হওয়া উচিত। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে সচেতনতামূলক লেখা প্রকাশ এবং টেলিভিশনগুলোতে এ নিয়ে টকশোর আয়োজন করা উচিত। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষকদের এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার দায়িত্ব নিতে হবে। এ খেলায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পূর্ণ বয়স্কদেরও জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। কিশোর-কিশোরীদের পাশাপাশি তাদেরও নজরদারিতে রাখতে হবে। মারাত্মক এই মরণব্যাধির মাধ্যমে সহজেই মানুষকে হিপনোটাইজ করা সম্ভব। সাদেকা হালিমের মতে, ব্লু হোয়েল গেম জঙ্গিবাদের মতই আরেকটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর