বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপ জয়ের আগাম উৎসবে ফ্রান্স!

ক্রীড়া প্রতিবেদক, মস্কো থেকে

ফরাসি বিপ্লবের ঢেউ পুরো ইউরোপকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল ফরাসিরা। ইউরোপে আরও একটি বিপ্লব বিশাল এলাকাজুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছিল। রুশ বিপ্লব। লাল সে বিপ্লবের ঢেউ পৃথিবীর অনেক দেশেই পৌঁছে গিয়েছিল। রুশ বিপ্লবের সেই ধারাটা এখন আর নেই। রাশিয়া অনেক বদলে গেছে। এখানে এখন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এসেছে নতুনত্ব। ইচ্ছে হলেই এখন অনেক টাকার মালিক হওয়া যায়। বড় বড় খামার কেনা যায় নিজের নামে। এই রাশিয়া আরও একটি বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়েছিল। ফুটবলের রুশ বিপ্লবের সম্ভাবনাটা শেষ করে দেয় ক্রোয়েশিয়া। স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার রাশানরা হেরে যায় ক্রোয়েটদের কাছে। বিশ্বকাপে রুশ বিপ্লব না হলেও ফরাসি বিপ্লব ঠিকই হয়ে গেল।

মিশেল প্লাতিনিকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে ভাবা হয়। কিন্তু তিনি ফ্রান্সকে নিয়ে সেমিফাইনালের উপরে উঠতে পারেননি। ফ্রান্সের ফুটবলে কিংবদন্তি খেতাব পাওয়া জিনেদিন জিদান দুবার দলটাকে ফাইনালে নিয়ে যান (১৯৯৮ ও ২০০৬)। প্রথমবার বিশ্বকাপ উপহার দেন ব্রাজিলের মতো দলকে হারিয়ে। দ্বিতীয়বার ইতালির কাছে হেরে গেলেও ফরাসিদের কাছে কিংবদন্তির খেতাব পেয়ে যান তিনি। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল ফুটবলার হিসেবে জিদানকে সবাই সম্মান করে। এরপর ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপ মোটেও ভালো কাটেনি ফরাসিদের। কিন্তু ভিতরে ভিতরে ঠিকই ওরা একটা বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই বিপ্লব ঘটল অবশেষে রাশিয়ায়! বিপ্লবে নেতৃত্ব দিলেন আঁতোয়ান গ্রিজম্যান। সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, পল পগবা, স্যামুয়েল উমতিতি, রাফায়েল ভারানেরা। বিশ্বকাপের ফরাসি বিপ্লব অনেকদূর এগিয়ে গেছে। ফাইনাল মঞ্চ পর্যন্ত। ১৫ জুলাই সেই মঞ্চে জয় পতাকা উড়াতে পারলেই বিপ্লব সার্থক হবে। নাহলে আরও একবার পথেই থেমে যাবে বিপ্লবের ঢেউ।

দিদিয়ের দেশমের রেকর্ডটা কী তবে হয়েই যাবে! ফ্র্যাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর কী তিনি অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপটা জিতবেন! এসব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ফুটবলভক্তদের মনে। বিশ্বকাপে ফরাসি বিপ্লবের কারিগর তো তিনিই। ছক কষতে পারেন ঠিকঠাক। সেই ছক ধরে লড়াইয়ের ময়দানে নামিয়ে দেন এক ঝাঁক লড়াকু সেনানি। যারা ফুটবলটাকে খুব গভীর থেকে জানে। নতুন একটা ফুটবলীয় দর্শন গড়ে তুলছে খুব ধীরে ধীরে! বল পজেশন ধরে রেখে প্রতিপক্ষের উপর চাপ দিয়ে গোল আদায়ের স্পেনীয় রীতি এখন বড় সেকেলে হয়ে গেছে। এতদিন বেলজিয়াম এই নীতিটা উপেক্ষা করেই সফল হয়েছিল। অথচ কী অবাক ব্যাপার, সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিজেদের নীতিটা বদলে দিল বেলজিয়াম? স্প্যানিশ কোচ মার্টিনেজ স্পেনীয় রীতিতেই কাবু করতে চেয়েছিলেন এবারের বিশ্বকাপের ফেবারিট ফ্রান্সকে। বল পজেশনে ৬৪-৩৬ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও ম্যাচটা জিততে পারেনি তারা। অন্যদিকে কাউন্টার আক্রমণে সফল হয়েছে ফ্রান্স। বেলজিয়াম নিজেরাও তো এতদিন কাউন্টার আক্রমণ থেকেই সফল হয়েছে!

রাশানরা খুব করে চেয়েছিল, বিশ্বকাপটা ওদের যেহেতু হয়নি বেলজিয়ামের হোক। ইডেন হ্যাজার্ডরা তাদেরকে হতাশ করার পর এখন আর কোনো কিছুর প্রতিই যেন তাদের কোনো আগ্রহ নেই। বিশ্বকাপ শেষ বলেই ধরে নিয়েছে। সত্যি বলতে, গত পরশু রাতেই তো বিশ্বকাপের ফাইনালটা হয়ে গেল! ফ্রান্সের সামনে ক্রোয়েশিয়া তো বটেই, ইংল্যান্ডকেও অনেকটা শিশুর মতো মনে হয়। এই ফ্রান্স যেন এবার বিশ্বকাপটা জিততেই এসেছে। তবে ফাইনাল মঞ্চে যে কোনো কিছুই হতে পারে। এই কারণেই ফ্রান্স আরও বেশি সতর্ক। আরও বেশি বিপ্লবী হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় বিশ্বকাপটা জিতে তারা নাম লেখাতে চায় উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনার সারিতে। আর ফরাসি সমর্থকরা! ওরা এখন স্বপ্নে বিভোর। এমনকি ফরাসি সাংবাদিকেরাও প্রেসবক্সে বিশ্বকাপ জয়ের আগাম উৎসব শুরু করে দিয়েছে!

সর্বশেষ খবর