সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মালয়েশিয়ায় সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

অবৈধদের ধরতে মালয়েশিয়ায় শুরু হওয়া সাঁড়াশি অভিযানে ঘুম হারাম করে দিয়েছে বাংলাদেশি প্রবাসীদের। সেখানে এক ধরনের আতঙ্ক ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে বৈধ ও অবৈধভাবে বাস করা দুই ধরনের প্রবাসীদের মধ্যেই। কারণ কাগজপত্রবিহীন অবৈধভাবে থাকা প্রবাসীদের গ্রেফতার করতে গিয়ে বৈধ ভিসার মেয়াদ থাকা প্রবাসীদেরও আটক করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে আটক হওয়া বৈধদের। তাই হয়রানি এড়াতে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর রাস্তাঘাট দুই দিন ধরে ফাঁকা হয়ে গেছে। শঙ্কায় পাবলিক পরিবহনও এড়িয়ে চলছেন অনেকে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমগুলোর খবর, থ্রি-প্লাস ওয়ানের মাধ্যমে অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরার সুযোগ শেষ হওয়ার পরপরই দেশটির স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহর থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। অভিযানে পাঁচ শতাধিক অবৈধ প্রবাসীকে গ্রেফতার করে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো খবর দেয়। তবে দেশটির অভিবাসন বিভাগ ৩৯৫ জনকে গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে। অবশ্য তাদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি রয়েছে তা গতকাল পর্যন্ত জানানো হয়নি।

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বারনামা এক রিপোর্টে বলেছে, সেপাংয়ে বান্দার বারু সালাক টিঙ্গি এলাকায় যে গ্লোব কারখানায় বিশৃঙ্খলা হয়েছে সেখানে এক বাংলাদেশি ও মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের এক কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। ওই অভিযানের সময় আহত ওই বাংলাদেশি পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। একজন অবৈধ নারী শ্রমিককে ধরতে গিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তা নূর এরা এলিনা জাহারুদ্দিন (২৪)। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা কাজ করেন। তার মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি, মিয়ানমার, পাকিস্তানি, কম্বোডিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও নেপালের শ্রমিকরা। এর বেশির ভাগেরই নেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। অনলাইন দ্য ডেইলি স্টার সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনকে উদ্ধৃত করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি। তার অর্ধেকেরই নেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। অভিবাসন ও অধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলছেন, এ কারণে যেসব বাংলাদেশির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। শনিবারও তাদের বেশির ভাগই ছিলেন বাসার ভিতরে। তারা বের হননি। অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। ওদিকে অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো এই ধরপাকড় বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান দাতুকে সেরি মুস্তফার আলী সাংবাদিকদের বলেন, সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান পরিচালিত হবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের (অবৈধ প্রবাসী) আইনের আওতায় আনতে না পারছি ততক্ষণ অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধ শ্রমিক এবং মালিকদের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় অবৈধ অভিবাসী ধরা পড়লেও এবারের অভিযান ভিন্ন। সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রিঙ্গিতসহ জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। এবার তিন বাহিনীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় অবৈধ অভিবাসী মুক্ত করা হবে। অবৈধ অভিবাসীদের বাসস্থান ও কর্মক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য রয়েছেন বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় ব্যক্তি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করবে অভিবাসন বিভাগ। এ ছাড়াও পরিত্যক্ত ঘর, ব্রিজের নিচে ও জঙ্গলে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বিদেশি নাগরিক দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। এ ছাড়া কাজের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করলে তাকেও অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আর অবৈধ হিসেবে ধরা পড়লেই ব্ল্যাকলিস্টসহ জেল জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। এদিকে শুধু অবৈধ অভিবাসী সন্ধানেই নয়, এবার মালিকপক্ষকেও আইনের আওতায় আনা হবে এবং গ্রেফতারদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রকার আউট পাস সংগ্রহ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অভিবাসন বিভাগের প্রধান মুস্তফার আলী।

সর্বশেষ খবর