সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাইবার ট্রাইব্যুনাল আরও সাত বিভাগে

আরাফাত মুন্না

সাইবার ট্রাইব্যুনাল আরও সাত বিভাগে

তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধের দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করতে আরও সাত বিভাগে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর আওতায় ট্রাইব্যুনালগুলো গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বিচারও এসব ট্রাইব্যুনালেই হবে বলে জানা গেছে। বর্তমানে শুধু রাজধানী ঢাকাতে একমাত্র ট্রাইব্যুনালে সাইবার অপরাধের বিচার হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে একটি করে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য এরই মধ্যে ৪২টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারক নিয়োগ দেবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ। মূলত বিচারক নিয়োগের পরই এসব ট্রাইব্যুনালের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। ঢাকায় অবস্থিত দেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনালে এক হাজার ৫০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশে সাইবার অপরাধ তীব্র হচ্ছে। ইন্টারনেটসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ অপরাধ। দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার বাইরে সাতটি বিভাগীয় শহরে সাতটি  ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনাল নামের একটি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। ২০১৩ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৬৮ ধারায় সরকার প্রয়োজনমতো ট্রাইব্যুনাল গঠনের এখতিয়ার রাখে। প্রস্তাবে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদনের পাশাপাশি এসব ট্রাইব্যুনালে জেলা জজ পদমর্যাদার সাতজন বিচারকের পদ সৃষ্টিসহ ট্রাইব্যুনালগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদে লোকবল নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়ে এরই মধ্যে সাত ট্রাইব্যুনালের জন্য ৪২টি পদ অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব পদের মধ্যে রয়েছে সাতজন জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারক, সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর সাতজন, বেঞ্চ সহকারী সাতজন, আউটসোর্সিং গাড়িচালক সাতজন, আউটসোর্সিং জারিকারক সাতজন এবং এমএলএসএসের সাতটি আউটসোর্সিং পদ। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে সাতটি ট্রাইব্যুনালের প্রতিটিতে একটি করে কার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ার মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রযুক্তি-সংক্রান্ত অপরাধ বাড়ছে। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার আইনও করেছে। ওই আইনের আওতায় দায়ের হওয়া মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে ঢাকায় একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। এখন মামলার দায়েরের হার বৃদ্ধি হওয়ায় সরকার প্রতিটি বিভাগে একটি করে ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর বিচারপ্রার্থী জনগণের দুর্ভোগও কমবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, দেশে সাইবার ক্রাইম বেড়ে যাওয়ায় মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। ফেসবুকে নারীদের নিয়ে আপত্তিকর ছবি ও অশ্লীল ভিডিও পোস্টের অভিযোগে ৫৭ ধারায় সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য প্রচার, অনলাইনে মানহানিকর সংবাদ প্রচারের অভিযোগেও ৫৭ ধারায় মামলা হচ্ছে। পাশাপাশি হ্যাকিং ও অনলাইনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৫ ও ৫৬ ধারায় মামলা হয়ে থাকে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ট্রাইব্যুনাল গঠন-সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের দ্রুত ও কার্যকর বিচারের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সরকার একজন দায়রা জজ বা একজন অতিরিক্ত দায়রা জজের সমন্বয়ে গঠন করবে এ আদালত। নতুন করে কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলে অন্য আদালত থেকে স্থানান্তরিত কোনো মামলা যে পর্যায়ে ছিল, ট্রাইব্যুনালে সেই পর্যায় থেকেই বিচার শুরু হবে। কোনো ভিন্নমত দেখা না দিলে আগের আদালতে যেসব সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে বা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালে আর ওই সব সাক্ষ্য গ্রহণের প্রয়োজন হবে না।

সর্বশেষ খবর