বুধবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মইনুল কারাগারে, গণস্বাস্থ্যে র‌্যাবের অভিযান, কামালের প্রতিবাদ

আদালত প্রতিবেদক

মইনুল কারাগারে, গণস্বাস্থ্যে র‌্যাবের অভিযান, কামালের প্রতিবাদ

আদালতে নেওয়ার পথে গতকাল ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন

নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তির অভিযোগে রংপুরে করা মানহানির মামলায় গ্রেফতার ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. কায়সারুল ইসলাম জামিন আবেদন নাকচ করে এ আদেশ দেন। এর আগে রাজধানীর ওয়ারী থানার এসআই সুকান্ত বিশ্বাস ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন ও ডিভিশন প্রদানসহ উপযুক্ত চিকিৎসার আবেদন করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে ডিভিশন প্রদানসহ উপযুক্ত চিকিৎসার আবেদন নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট আদালতে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য আদেশ দেয়। আদেশে বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি অন্য জেলায় দায়ের করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রেকর্ড এই আদালতে না থাকায় আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগসমূহের গুরুত্ব এবং কোন কোন ধারায় মামলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা এ মুহূর্তে বিবেচনায় আনার সুযোগ নেই। সার্বিক বিবেচনায় অসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হলো। আসামিকে সি/ডব্লিউ মূলে জেল হাজতে প্রেরণ করা হোক। এ ছাড়া আসামি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের পক্ষে ডিভিশন প্রদানসহ উপযুক্ত চিকিৎসার আবেদন উপ-নথিভুক্ত রাখা হোক। এর আগে শুনানিতে মইনুল হোসেনের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়া, গোলাম মস্তফা খান, মনিরুজ্জামান হাওলাদার, বিপুল বাগমারসহ অন্যরা বলেন, সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলার অভিযোগে দরখাস্তকারী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে। কিন্তু এ মামলার বাদী মাসুদা ভাট্টি নন, অন্য একজন। এ ঘটনায় মাসুদা ভাট্টি নিজেই ঢাকার সিএমএম আদালতে বাদী হয়ে আগেই একটি মামলা করেছেন। একই ঘটনায় একাধিক মামলা চলতে আইনে বাধা আছে। বাদী যে অভিযোগে এ মামলাটি করেছেন, তা জামিনযোগ্য। বিধান অনুযায়ী, জামিনযোগ্য ধারার কোনো মামলায় আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হলে তিনি জামিন পেতে পারেন।

জামিনের বিরোধিতা করে বাদীপক্ষের আইনজীবী কাজী মো. নজিবুল্লাহ হিরু, প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, আসামি মইনুল হোসেন এক নারী সাংবাদিককে অপমান করেছেন। তাকে চরিত্রহীন বলেছেন। এটা গর্হিত অপরাধ। তার স্ট্যাটাসের লোকের এ রকম কটূক্তি মোটেও শোভা পায় না। তার উক্তি গোটা নারীসমাজের বিরুদ্ধে গেছে। নারীসমাজ অপমানিত হয়েছে। এ কারণে মেয়ের বয়সী মাসুদার কাছে তিনি লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এ মামলার ধারা জামিনযোগ্য হলেও দেশ ও সমাজের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে আদালত তা নামঞ্জুর করতে পারে। এরপর আসামি মইনুলের আইনজীবীরা আদালতে হট্টগোল শুরু করেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা শুনানির পর বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে মইনুল হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে এজলাসকক্ষে হৈ চৈ পড়ে এবং আদালতের বারান্দায় স্লোগান দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। আদেশের পর খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মামলা জামিনযোগ্য। জামিন না দেওয়ার একমাত্র কারণ হলো সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন।’ অন্যদিকে আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘এ মামলার নথি যেহেতু রংপুরে, জামিনের আবেদন রংপুরেই করতে হবে। আমরা বিষয়টি শুনানি করেছি এবং আসামির জামিন নামঞ্জুর হয়েছে।’ এর আগে রংপুরে করা মানহানির মামলায় সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে মইনুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। রংপুর আদালতে মিলি মায়া বেগম নামের এক নারী মানহানির অভিযোগ এনে মামলা করেন। ওই মামলায় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে রংপুরের অতিরিক্ত বিচারিক হাকিম আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা ২২ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ১৬ অক্টোবর বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের টকশোয় আলোচনার একপর্যায়ে মাসুদা ভাট্টির এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য কমরন ব্যারিস্টার মইনুল। এমন মন্তব্যের পর সারা দেশে এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়েছে।

কারাগারের মেঝেতে মইনুল : ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার পর সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে মইনুল হোসেনকে। আমদানি ওয়ার্ড নামে পরিচিত ওই ওয়ার্ডে ব্যারিস্টার মইনুলের সঙ্গে বন্দী আছেন আরও ৪০ জন। সেখানে কোনো খাট কিংবা চেয়ারের ব্যবস্থা নেই। কারাসূত্র জানায়, কোনো বন্দী কারাগারে এলে প্রথমে তাকে আমদানি ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। এরপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার স্থান ঠিক করা হয়। মইনুল হোসেন কারাগারে পৌঁছার পর আদালতের অন্য কোনো নির্দেশনা না থাকায় তাকে সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে রাখা হয়েছে।

গণস্বাস্থ্যে র‌্যাবের অভিযান : সাভার প্রতিনিধি জানান, সাভারে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল ও ফার্মাসিউটিক্যালসে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সন্ধ্যায় সাভারের বাইশমাইল এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রাসেল হাসানের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় র‌্যাব ছাড়াও পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল ও ফার্মাসিউটিক্যালস গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে টকশোয় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এর পরই সাভারে জায়গা দখল চেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়।

ড. কামাল হোসেনের উদ্বেগ : এদিকে সরকারের নেওয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গতকাল বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আমি এবং অন্য সহকর্মীরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি; যা প্রধানমন্ত্রীর চিন্তার অনুকূল। দুর্ভাগ্যবশত, সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে আমরা উদ্বিগ্ন। এতে সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছি। এ সময় রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি ও গ্রেফতার অনাকাঙ্ক্ষিত।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে মামলা

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

মাগুরা : মাসুদা ভাট্টিকে কটূক্তি করার বিষয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের নামে মাগুরায় ৫০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা হয়েছে। মাগুরার সিনিয়র জুডিশিয়াল দ্বিতীয় আদালতে গতকাল মামলাটি করেন মাগুরা জেলা মানবাধিকার সংস্থার মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফরিদা রহমান। বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সনি আহমেদ জানান, বাদী মইনুল হোসেনের বক্তব্যে সংক্ষুব্ধ হয়ে ৫০০ কোটি টাকার এ মানহানি মামলা দায়ের করেছেন। ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসু অভিযোগটি আমলে নিয়েছেন।

কক্সবাজার : কক্সবাজারে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গতকাল সকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ্র আদালত এ পরোয়ানা জারি করে। কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলামের করা মামলাটি আদালত আমলে এনে ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। বাদীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেলসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী।

ময়মনসিংহ : ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ভালুকা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা মনি গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আমলি আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক রোজিনা খান মামলাটি আমলে নিয়ে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর