শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আমাদের ভাষা জাদুঘর

জয়শ্রী ভাদুড়ী

আমাদের ভাষা জাদুঘর

স্নায়ুতে সাড়া জাগানো অনুভূতিগুলো হৃদয়ের প্রকোষ্ঠ ছুঁয়ে পৌঁছে যায় পাশের মানুষটির কাছে। এই বার্তাবাহকের নাম ভাষা। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মুখের ভাষা। পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে ভাষার। তাই বিভিন্ন দেশের ভাষার ইতিহাস তুলে ধরতে কাজ করছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভাষা জাদুঘর। ভাষা জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচে ঘেরা প্রবেশপথের চৌকাঠ পার হতেই চোখের সামনে টানানো বিভিন্ন দেশের ভাষার ইতিহাস। কোন দেশে কোন ধরনের ভাষা রয়েছে তার তালিকা রয়েছে এখানে। কোন ভাষায় কতজন মানুষ কথা বলে সেই তথ্যও রয়েছে। শুধু তাই নয় ভিনদেশি মানুষের ভাষা শোনারও ব্যবস্থা রয়েছে জাদুঘরে। গ্রাফিক্সের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেদেশের মানচিত্র। জাদুঘরের শুরুতেই রাখা বাংলাদেশের মানচিত্র। সেখানে আলাদাভাবে ছক কষে তুলে ধরা হয়েছে ভাষার নাম, অঞ্চল এবং ভাষাভাষি মানুষের সংখ্যা। বাংলাদেশের পাশেই ক্রমানুসারে স্থান পেয়েছে ভুটান, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য ভাষার অতীত ও বর্তমানের হালচাল। এশিয়া, ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশের সব দেশের ভাষা সংরক্ষিত রয়েছে এ জাদুঘরে। আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর ভাষা সংরক্ষণের কাজও প্রায় শেষের দিকে। ক্লাস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে ভাষা জাদুঘরে এসেছিলেন সেগুনবাগিচা হাই স্কুলের ছাত্র অভ্র। কানে হেডফোন লাগিয়ে স্ক্রিনে পলকহীন চোখে তাকিয়ে রয়েছে সে। শুনছে বিভিন্ন দেশের ভাষাভাষি মানুষের কথা। না বুঝলেও বিভিন্ন দেশের মানুষের কথা শোনার কারণ জানতে চাইলে বলে, ভাষা না বুঝলেও বলার ধরনে, কণ্ঠের ওঠানামায় বোঝা যায় কষ্টের কথা বলছেন নাকি আনন্দের কথা। অসংখ্য অজানা ভাষার কথা জেনেছি এখানে এসে। ক্লাসের ফাঁকে সময় পেলেই আমরা এই ভাষা জাদুঘরে আসি। বাংলাদেশে যে এত রকমের ভাষা আছে তা এখানে আসার আগে জানতামই না।  শুধু ভাষা সংরক্ষণই নয়, ভাষার ইতিবৃত্ত খুঁজে বের করতে জরিপ এবং গবেষণার কাজও করছে প্রতিষ্ঠানটি। ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ তুলে ধরতে আর্কাইভ তৈরি করছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। এ বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আর্কাইভটি উদ্বোধন করবেন। প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার শিখাতে এই প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ২০টি ব্যাচে ৫৩৪ জন শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ২০১০ সালে কার্যক্রম শুরু করার পর এ পর্যন্ত ভাষা বিষয়ে ৫টি আন্তর্জাতিক এবং ১৭টি জাতীয় পর্যায়ের সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। ভাষা সংক্রান্ত জ্ঞান মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে এখানে রয়েছে দুর্লভ এক লাইব্রেরি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষা বিষয়ে ১০ হাজারেরও বেশি বই রয়েছে বিশেষায়িত এই লাইব্রেরিতে। যে কেউ চাইলেই এই লাইব্রেরিতে গিয়ে ভাষা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারে। ভাষা বিষয়ে গবেষণায় গবেষকদের প্রাথমিক তথ্যের জোগান দেয় এই লাইব্রেরি।  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সবার জন্য ভাষা শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া, ভাষার ইতিবৃত্ত সংরক্ষণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীর বুকে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য ভাষা। যথাযথভাবে ভাষার ইতিহাস সংরক্ষরণের জন্য কাজ করছি আমরা। আর এই সংগ্রহশালা হলো ভাষা জাদুঘর। কার্যক্রম শুরুর ১০ বছরে আমরা বেশ কিছু কাজ করেছি। আমরা এখন চেষ্টা করছি ভাষা বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর