সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

তরুণ নেতৃত্বে দল সাজাবে বিএনপি

কাউন্সিল ঘিরে পরিকল্পনা, বিভাগীয় শহরে শিগগিরই কর্মসূচি

মাহমুদ আজহার

তরুণ নেতৃত্বে দল সাজাবে বিএনপি

আগামীতে তরুণ নেতৃত্বে সাজবে বিএনপি। সর্বস্তরের কমিটিতে তারুণ্যনির্ভর নেতা চায় দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, দলকে চাঙ্গা করতে হলে তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্বের বিকল্প নেই। সরকারবিরোধী আন্দোলন ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায়ে তরুণ নেতৃত্ব কাজ করবে বলে মনে করছেন তারা। তাই আগামী অক্টোবরকে টার্গেট করে সপ্তম জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। জানা গেছে, দলের প্রবীণ নেতাদের উপদেষ্টা কমিটিতে ঠাঁই দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। বিএনপির হাইকমান্ড প্রত্যাশা করছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে দলের প্রধান বেগম জিয়া মুক্তি লাভ করবেন। তার মুক্তি লাভের পরপরই কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা চলছে। কারাবন্দী বেগম জিয়ার ‘সবুজ সংকেত’ নিয়েই কাউন্সিলের প্রাক প্রস্তুতির দিকে এগোচ্ছে দলটি। তবে এর মধ্যে বেগম জিয়া মুক্তি না পেলে ঘরোয়াভাবে কাউন্সিল করেই আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্তির জন্য রাজপথে নামবে বিএনপি। সর্বশেষ গত শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও কাউন্সিল নিয়ে কথা বলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি কাউন্সিলের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করেন। আগামী শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কাউন্সিলের জন্য উপ-কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা হবে। দলের গঠনতন্ত্রেও কিছু সংশোধন করা হবে। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এবারের কাউন্সিল বিগত সময়ের মতো জাঁকজমকপূর্ণ নাও হতে পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশেই কাউন্সিল অনুষ্ঠান করার চিন্তাভাবনা চলছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শনিবার সকালে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলেন, ‘দলের জাতীয় কাউন্সিলের আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। কাউন্সিলের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে আমাদের সাংগঠনিক জেলা ও অঙ্গসংগঠনগুলোর পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সপ্তম জাতীয় কাউন্সিলের কথা ভাবছি। সর্বাগ্রে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রত্যাশা করছি। সরকার হস্তক্ষেপ না করলে আশা করছি, শিগগিরই বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন। তাকে নিয়েই আমরা কাউন্সিল করতে চাই। নতুন নেতৃত্বে বিএনপিকে চাঙ্গা করাই আমাদের উদ্দেশ্য।’ এ দিকে কাউন্সিলের আগে বিএনপি সারা দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা বিভাগীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক সফরও করতে পারেন। বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকেও সম্পৃক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে। এ নিয়ে আজ ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী নেতাদের আগামী দিনের নেতৃত্বে মূল্যায়ন করা হবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্য, ত্যাগী ও অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। সংস্কারপন্থিদের মধ্যে যারা দলে সম্পৃক্ত হয়েছেন তাদেরও পদায়ন করা হবে। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে পিছিয়ে থাকা নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হবে না। এ সরকারের আমলে যাদের গায়ে মামলা হয়নি, হামলার শিকার হননি, সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে নিজের ব্যবসা বাণিজ্য টিকিয়ে রেখেছেন তাদের প্রতিও কড়া দৃষ্টি রাখছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হবে। এ ছাড়া কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত কমিটিতে এবারও ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে। গত কাউন্সিলের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এবার কাউন্সিলে নেওয়া সব সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করা হবে। কাউন্সিলের তিন বছরেও মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উপ-কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এবার দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব কমিটিই গঠন করা হবে। নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাও করা হবে। প্রয়োজনে বর্ধিত সভা করা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কাউন্সিলের সামগ্রিক বিষয় কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এবার কেন্দ্র থেকে আর কোনো কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হবে না। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোতে একই আদলে কমিটি গঠন করা হবে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দলের চেয়ারপারসন কারাগারে। এখন সাংগঠনিকভাবে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দলের স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সঙ্গে কথা বলে তিনি দল পরিচালনা করছেন। কাউন্সিলের উদ্যোগ ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দলে। সব কমিটিতেই যোগ্য ও ত্যাগীরা যেন মূল্যায়িত হয় সেটাই চাওয়া।’ বিএনপির রাজশাহী বিভাগী সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর দলকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা ইতিবাচক উদ্যোগ। আমাদের চাওয়া আগামী দিনের কাউন্সিলে নির্বাচনের মাধ্যমে ত্যাগী ও যোগ্যদের যেন নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়।’

সর্বশেষ খবর