শিরোনাম
বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

তালা ঝুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

বন্ধ ক্লাস পরীক্ষা, ছাত্রনেতার ওপর হামলা, ছাত্রলীগের স্মারকলিপি

নাসিমুল হুদা, ঢাবি

তালা ঝুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ -জয়ীতা রায়

অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল হামলা, লাঞ্ছনা ও পাল্টাপাল্টি সমাবেশ হয়েছে। উপাচার্য কার্যালয়ের প্রবেশমুখে আন্দোলনকারীদের দেওয়া তালা ভেঙেছে ছাত্রলীগ। ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আন্দোলন  নিয়ে অবস্থানের প্রশ্নে প্রকাশ্যে বিতর্কে জড়িয়েছেন ডাকসুর ভিপি ও জিএস। সংকট সমাধানে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, ডাকসুকে পাশ কাটিয়ে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে তালা খুলিয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা করেনি। এর মাধ্যমে প্রশাসন আবারও প্রমাণ করেছে, তারা ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি। এ ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থী নিজেরাই কর্মসূচি পালন করবে বলেও জানান তিনি। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে টানা তিন দিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন করছে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকালও বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক সব ভবনে তালা লাগিয়ে দেয় তারা। অধিভুক্তি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশ^াস দিয়ে আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ক্লাসে ফিরতে আহ্বান জানিয়েছিল ডাকসু। কিন্তু সেই আহ্বানকে আমলে না নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই উপাচার্য ভবনের প্রবেশমুখে তালা দিয়ে কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন। দুপুর ১টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। সমাবেশের পর সাত কলেজের অধিভুক্তির বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের দাবিতে উপ-উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিতে যায় ছাত্রলীগ। এ সময় উপাচার্য ভবনের প্রবেশমুখে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী এসে তালা ভাঙার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা তাতে বাধা দেন। এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি মিছিল গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে সেখানে থাকা শিক্ষার্থীদের তালা খুলে দিতে বলেন। শিক্ষার্থীরা রাজি না হওয়ায় তাদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বাক-বিত-া চলতে থাকে। পরে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন তারা। পরে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদের কাছে স্মারকলিপি দেন ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।

আখতারের ওপর হামলা : ছাত্রলীগের স্মারকলিপি প্রদানের সময় মল চত্বরে হামলার শিকার হন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, উপাচার্য কার্যালয়ের তালা ভাঙার পর আমি মল চত্বরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমাদের কয়েক শিক্ষার্থীকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাদের জন্য কিছুটা বিলম্ব হচ্ছিল। তখন জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাব্বী হকের নেতৃত্বে হঠাৎ করে একদল ছাত্রলীগ কর্মী আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। তারা আমার কাঁধে, পিঠে এবং কোমরে আঘাত করে। আমাদের সঙ্গে যে মেয়েরা ছিল তাদেরও লাঞ্ছিত করে। তিনি আরও বলেন, আমরা সেখান থেকে কোনো রকম দৌড়ে সরে আসি। এ হামলার নেতৃত্বদানকারী রাব্বী হক লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

ছাত্রলীগের বাধায় প- সমাবেশ, মুখোমুখি ভিপি-জিএস : আখতারের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে অপরাজেয় বাংলার সামনে একটি সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে ডাকসুর ভিপি নূর বক্তব্য শুরু করলে উপাচার্য কার্যালয় থেকে আসা ছাত্রলীগের একটি মিছিল সমাবেশের ভিতর ঢুকে যায়। মিছিলে ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেন। এ সময় গোলাম রাব্বানীকে নূরের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করতে দেখা যায়। নূরও উচ্চৈঃস্বরে তার কথার উত্তর দিতে থাকেন। গোলাম রাব্বানীর উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগ কর্মীদের ভিপি নূরকে শাসাতে দেখা যায়। তবে ধমক দিয়ে তাদের চুপ করান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘক্ষণ বাদানুবাদের পর স্থান ত্যাগ করেন গোলাম রাব্বানী।  

ষড়যন্ত্র দেখছে ছাত্রলীগ : আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে কেউ কেউ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল ও ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা। দুপুরে সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, আন্দোলনের নামে যারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত করছে, তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। ছাত্রলীগ এ ধরনের কোনো চক্রান্ত মেনে নেবে না।

বুধবার থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমরা সাত কলেজের সঙ্গে থাকতে চাই না, তারাও আমাদের সঙ্গে থাকতে চায় না। প্রশাসনকে এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। ছাত্রলীগ সাত কলেজ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করবে মন্তব্য করে ডাকসু ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের ভিসি স্যার দেশের বাইরে আছেন। তারা দেশে ফিরলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করা হবে। ছাত্রলীগ ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে এক শ্রেণি এ আন্দোলন নিয়ে চক্রান্ত করছে। শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ক্লাস করা, তা খর্ব করা হচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বুধবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষায় বাধা দিলে, তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর