বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

এডিসের স্থায়ী সমাধানে আসছে বিশেষজ্ঞ টিম

• সড়ক বিভাজনের জমাট পানিতে মশা • চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ডিএনসিসি • ১২০০ বাড়িতে এডিসের লার্ভা ধ্বংস • নারী চিকিৎসকসহ তিনজনের মৃত্যু

জয়শ্রী ভাদুড়ী

এডিসের স্থায়ী সমাধানে আসছে বিশেষজ্ঞ টিম

রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল থেকে পল্টন থানার সামনে যাওয়ার রাস্তায় সড়ক বিভাজনে রাখা ফাঁকা টব। গাছ না থাকায় অযতেœ পড়ে থাকা এসব টবে জমে থাকছে বৃষ্টির পানি। একটু দূরে ইউটার্নের সামনে গিয়ে দেখা যায় সড়ক বিভাজনের এবড়োথেবড়ো টাইলসে জমে আছে পানি। জমাটবাঁধা স্বচ্ছ পানিতে ভাসছে মশার ছানাপোনা। এসব জমে থাকা পানিকেই বংশবিস্তারের উপযুক্ত স্থান হিসেবে নিচ্ছে এডিস মশা।

শুধু সড়ক বিভাজন নয়, রাস্তা সংস্কারের জন্য খুঁড়ে রাখা অসমতল অংশ, ফুটপাথের ভাঙা অংশ, ফুটওভার ব্রিজের ফাঁকা ফুলের টবে জমে থাকা পানিতে বসতি গড়ছে মশা। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে পাওয়া গেছে এমন দৃশ্য। শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের পাশের রাস্তার অর্ধেক অংশ শুকনো আর ফুটপাথ ঘেঁষে বাকি অর্ধেক অংশে দীর্ঘদিন ধরে জমে আছে বৃষ্টির পানি। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না  থাকায় রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কে সবার চোখের সামনে নিশ্চিন্তে লার্ভা ছেড়েছে মশা। এ অবস্থা দেখে কিছু ব্লিচিং পাউডার সংগ্রহ করে পানিতে ছড়িয়ে দিয়েছেন ইকবাল রহমান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইকবাল রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরেই এখানে পানি জমে আছে। কয়েক দিনের রোদে পানি কিছুটা শুকালেও মশার লার্ভা এখনো আছে। শুনেছি ব্লিচিং পাউডারে মশার লার্ভা নষ্ট হয়। তাই বাসা থেকে কিছু ব্লিচিং পাউডার নিয়ে এসেছি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।  

নারী চিকিৎসকসহ তিনজনের মৃত্যু : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ডা. রেহানা বেগম (৬৭)। ঢাকার গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তিনি মারা যান। তার স্বামী ডা. নজরুল ইসলামও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। এর আগে তারা দুজনই বেশ কিছু দিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে সৌদি আরবে কর্মরত ছিলেন। এদিকে ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই দিনে ফরিদপুরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সাহেব আলী (৪৫)। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার মাটিপাড়া গ্রামের মনছের আলীর ছেলে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে গুরুতর অবস্থায় সাহেব আলীকে হাসপাতালে আনা হয়। রাতেই তার মৃত্যু হয়। এদিকে শরীয়তপুরের ডামুড্যায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গৃহবধূ সুমাইয়া ইয়াসমীন সোমবার রাতে মারা গেছেন। গতকাল তাকে দাফন করা হয়। তিনি উপজলার ডামুড্যা পৌরসভার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের কামাল ঢালীর স্ত্রী। তার স্বামী জানান, সপরিবারে তারা ঢাকায় বসবাস করতেন। ঈদের কয়েক দিন আগে নিজ বাড়িতে আসেন।

এডিসের স্থায়ী সমাধানে আসছে বিশেষজ্ঞ টিম : দেশে এডিস সমস্যার স্থায়ী সমাধানে স্ট্রেইল ইনসেক্ট টেকনিকের (এসআইটি) সম্ভব্যতা যাচাইয়ে বিশেষজ্ঞ টিম আসছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সমন্বয়ে গঠিত টিম ২১ থেকে ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ সফর করবে। স্ট্রেইল ইনসেক্ট টেকনিকে পুরুষ মশাকে টার্গেট করে তেজস্ক্রিয়তার সাহায্যে বন্ধ্যা করা হয়। বন্ধ্যত্বকরণের পর পুরুষ মশাগুলোকে পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে স্ত্রী মশা প্রজননে অক্ষম হয়ে পড়ে। এই পদ্ধতি বাংলাদেশে এডিস মশার বংশবিস্তার কমাতে কতটা কার্যকরী তার সম্ভব্যতা যাচাই করা হবে। এই পদ্ধতি কার্যকর হলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধানের পথ তৈরি হবে।

গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত : স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৭২ জন। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৫০ জন এবং ঢাকাসহ অন্য বিভাগের হাসপাতালে ৮২২ জন।

ডিএনসিসির দিনে আড়াই ঘণ্টার অভিযান : এডিস মশা নিধনে ২০ দিনের ‘চিরুনি অভিযানে’ নেমেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গতকাল রাজধানীর গুলশান-১ এর শহীদ ফজলে রাব্বী পার্কে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ অভিযানের উদ্বোধন করেন। আগের অভিযানে মচকানো পা নিয়ে ক্রাচে ভর দিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।

ঢাকা দক্ষিণে ১২০০ বাড়িতে এডিসের লার্ভা ধ্বংস : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক হাজার ২০০ বাড়িতে ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এডিস মশা নিধন অভিযান উদ্বোধনের সময় তিনি এ কথা বলেন। সাঈদ খোকন বলেন, ইতিমধ্যে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে ৫৮ হাজার ৭৪৮ বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ১২০০ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। সেগুলো ধ্বংস করার পাশাপাশি বাড়ির মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে।

স্থায়ী পরিকল্পনা জানতে চায় হাই কোর্ট : সারা বছর মশা নিধনে সরকারের স্থায়ী পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে এডিস মশা নিধনে চলমান অভিযানে কোন ওয়ার্ডে কতজন কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন, তারা কখন যাচ্ছেন এবং কী কাজ করছেন তার বিস্তারিতও জানতে চেয়েছে আদালত। এ সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান বলেন, মশা নিধনে বিভিন্ন সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জনবল নিয়োগে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন ওষুধ এনে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইনজীবী বলেন, ১১ আগস্ট থেকে নতুন একটি ওষুধ ছিটানো শুরু হয়েছে। এ সময় আদালত বলে, নতুন ওষুধ দিচ্ছেন তাতে কি মশা মরে? না দৌড়ে অন্য জায়গায় চলে যায়? জনবল কি নিয়োগ হয়েছে?

উত্তর সিটির আইনজীবী বলেন, রোগী কমছে। তার মানে ওষুধে কাজ হচ্ছে। আর কর্মীরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছে কি না সেটা তদারকির জন্য ট্র্যাকিং সিম দেওয়া হয়েছে তাদের। তিনি বলেন, এত ব্যাপক ভিত্তিক তো আগে কখনো হয়নি। এবারই হলো। তখন আদালত বলে, কেন হলো, এটা তদন্ত করা দরকার। উত্তর সিটির আইনজীবী বলেন, ৪০ হাজার লিটার ওষুধ এসেছে। আরও ৪০ হাজার লিটার আসবে। ৫৪টি ওয়ার্ডকে পাঁচটি জোনে ভাগ করে মনিটর করা হচ্ছে। আদালত বলে, কলকাতাসহ অন্যান্য শহরে সারা বছর কাজ চলে। আপনারা সারা বছরের জন্য কী পরিকল্পনা নেবেন সেটা জানান। পরে আদালত আগামী সোমবার পর্যন্ত মামলাটি মুলতবি করে।

সর্বশেষ খবর