সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
জামালপুরের ডিসির কেলেঙ্কারি

আগেই অনেক অভিযোগ জমা পড়েছিল, ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়

নিজামুল হক বিপুল

দুর্নীতি, অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলাসহ অসংখ্য অভিযোগ ছিল বিতর্কের জন্ম দেওয়া জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ জমাও হয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরে থাক, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর কোনো তদন্তই করেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বরং ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে তাকে শুদ্ধাচার সার্টিফিকেটের জন্য মনোনীত করা হয়।  তিনি সেটা পানও। চাকরিবিধির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মাস কয়েক আগে তাকে একবার উঠিয়ে আনারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তিনি ওই সময় জামালপুর থেকে আসতে চাননি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিতর্কের জন্ম দিয়ে জামালপুর থেকে প্রত্যাহার হওয়া ডিসি আহমেদ কবীর সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল আগে থেকেই। যার মধ্যে ছিল দুর্নীতি ও অনিয়ম, ক্ষমতার প্রভাব খাটানো। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও জমা পড়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। সূত্র জানায়, ডিসি আহমেদ কবীর অনেক আগে থেকেই ওই নারীর সঙ্গে মেলামেশা করে আসছিলেন। এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও মন্ত্রণালয় থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জামালপুরের ডিসির বিরুদ্ধে পূর্ব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, এখন থেকে ডিসি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব বিষয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দেখা হবে। সেই সঙ্গে কর্মরত কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আহমেদ কবীরের সঙ্গে নারী অফিস সহকারীর আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মুশফিকুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হয়। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধি-শাখার উপসচিব। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একজন প্রতিনিধি। কমিটির সদস্যরা হবেন ন্যূনতম উপসচিব মর্যাদার। কমিটিকে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তাদের শুধু ভিডিওটির বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরের অন্যান্য অপকর্মের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, দোষ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। আদেশে কমিটিকে প্রকাশিত ভিডিওটির সঠিকতা যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটি প্রয়োজনে সরেজমিন পরিদর্শন করবে এবং ভিডিওটি যাচাইয়ের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবে। কমিটির প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট মতামত দিতে হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি চাকরির বিধান অনুযায়ী দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মুশফিকুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, আমরা সোমবার থেকে কাজ শুরু করব। আশা করি নির্ধারিত ১০ কর্মদিবসের মধ্যেই প্রতিবেদন দিতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর