মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের লজ্জাজনক করুণ হার

আসিফ ইকবাল, চট্টগ্রাম থেকে

বাংলাদেশের লজ্জাজনক করুণ হার

মাত্র ৭০ মিনিটের চিত্র নাট্য! ১৮.৩ ওভারের স্ক্রিপ্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরতে পরতে লুকিয়েছিল চরম নাটকীয়তা। মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরির এই সময়টিকে কোনোভাবেই জয় করতে পারেননি সাকিবরা। হাতছাড়া করেছেন নায়ক, মহানায়ক হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। অথচ ম্যাচ বাঁচিয়ে দিব্যি মহানায়ক হতে পারতেন সাকিব, সৌম্য, মেহেদী মিরাজ, তাইজুল কিংবা নাইম। কিন্তু ১১১ বল জয়ের  যে কঠিন লড়াইটি ছিল, সেই লড়াই জিততে পারেনি সাকিব বাহিনী। উল্টো রশিদ খানের মায়াবী ঘূর্ণির বিভ্রান্তে ২০ বল আগে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। হার মানে ২২৪ রানের পাহাড়সম ব্যবধানে। যা নিজেদের ১১৫ টেস্ট ক্যারিয়ারে ৭৬ নম্বর হার এবং রানের ব্যবধানে ২২তম। সর্বোচ্চ রানের সংখ্যায় দশম বৃহত্তম। এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের নাটকটি রচিত হয়েছে দিনভর বৃষ্টিতে। চৈত্র মাসে খরা কাটাতে বৃষ্টির জন্য এক সময় গ্রামে-গঞ্জে দোয়া হতো, প্রার্থনা করা হতো। এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। হারিয়ে যাওয়া সেই স্মৃতি বহু বছর পর গতকাল ফিরেছিল চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে লজ্জার হার এড়াতে ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেটপ্রেমীরা সবাই প্রার্থনা করেছেন বৃষ্টির জন্য। তাদের প্রার্থনা শুনে গোটা দিন থেমে বৃষ্টি ঝরেছে সাগরিকায়। ধূম বৃষ্টিতে খেলাও বন্ধ হয়েছে। কিন্তু  ভেসে যায়নি ম্যাচ। চতুর্থ দিন শেষে ম্যাচের যে চিত্র ছিল, তাতে টাইগারদের হার ছিল অবধারিত। ম্যাচ বাঁচাতে পঞ্চম দিনের পুরোটা সময় ব্যাট করতে হতো সাকিব, সৌম্য,  মেহেদী, তাইজুল ও নাইমকে। ২৬২ রান করে ম্যাচ জিততে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করতে হতো তাদের। রশিদ, নবি, জহির ও কাইসের ঘূর্ণির বিপক্ষে অসম্ভব বলেই চতুর্থ দিন শেষে মিডিয়ার মুখোমুখিতে দুষ্টুমিচ্ছলে বলেছিলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘এখন বৃষ্টিই পারে ম্যাচ বাঁচাতে।’ কথাটা হাসিমুখে বললেও তাতে ছিল অসহায় আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত। ক্রিকেটারদের ইচ্ছাতে ভোর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এজন্য দুপুর ১টা পর্যন্ত খেলা হয়নি। এরপর যাওবা শুরু হয়েছিল, মাত্র ৭ মিনিটে ১৩ বল হওয়ার পর ফের বন্ধ হয়ে যায়। স্কোর বোর্ডে যোগ হয় মাত্র ৭ রান। ১৯ বছরে বৃষ্টি বহুবার বেঁচেছে দল। তাই বলে বৃষ্টির জন্য এমনভাবে কাঁদতে দেখা যায়নি কখনো!  শেষ বিকালে বৃষ্টি বন্ধ হলে খেলা নির্ধারিত হয় ১৮.৩ ওভার। ম্যাচ বাঁচাতে ৭০ মিনিটের ওই লড়াইটি জিততে হতো সাকিব, সৌম্যদের। উল্টো চাপে পড়ে জহিরের প্রথম বলেই ফিরে যান সাকিব। অধিনায়কের ফিরে যাওয়ার ধাক্কা আর সামলাতে পারেনি টাইগাররা। যদিও সৌম্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রশিদের লেগ স্পিন, গুগলী ও আর্মারের বিপক্ষে তালগোল হারিয়ে ফেলছিলেন বারবার। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ শেষ হওয়ার মাত্র ২০ বল আগে রশিদের লেগ স্পিনকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে যেয়ে শর্ট লেগে ইব্রাহিমকে ক্যাচ দেন। ওই ক্যাচেই শেষ খেলা। তার আগে অবশ্য তাইজুলকে দেওয়া লেগ বিফোরটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বল তার প্যাডে লাগার আগে ব্যাট ছুঁয়েছিল হালকাভাবে। ৩৯৮ রানের অবিশ্বাস্য টার্গেট তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৭৩ রানে। ১৯ বছরের অভিজ্ঞ বাংলাদেশ টেস্ট দলকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলায় মেতেছিলেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। লেগ স্পিনের উপর অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ দেখিয়ে দুই ইনিংসে উইকেট নেন ১১টি। ১৪২ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক হিসেবে রশিদ ৫০ রানের পাশাপাশি ১০ বা ততোধিক উইকেট নেওয়ার বিরল রেকর্ড গড়েন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর