মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
পর্যবেক্ষণ

গভীর ষড়যন্ত্র চলছে

পীর হাবিবুর রহমান

গভীর ষড়যন্ত্র চলছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী যখনই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন এবং দলে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় শুদ্ধি অভিযানের সূচনা করেছেন ঠিক তখন চারদিকে যেন হঠাৎ করে এক গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, দীর্ঘদিন রাজনীতিতে সুবিধা করতে না পারা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শক্তির ওপর বিগত নির্বাচনে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে জাতীয় সরকারের যে প্রস্তাব এসেছে পর্দার অন্তরালে চলমান ষড়যন্ত্রেরই আলামত এটি। দেশের ব্যবসায়ী সমাজ থেকে শেখ হাসিনার দুঃসময়ের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদেরও দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা চালানো শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে দেশে-বিদেশে নানামুখী অপপ্রচার। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল’। এই বার্তা দেওয়ার পরই ২৮ সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বিএনপিনির্ভর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ড. রেজা কিবরিয়া সরকারের পদত্যাগ ও জাতীয় সরকার গঠনের তিন দফা প্রস্তাব দেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ওয়ান ইলেভেন আসার প্রয়োজন নেই। ওয়ান ইলেভেন যাতে না আসে সেজন্য আগেভাগেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন। রেজা কিবরিয়ার জাতীয় সরকারের বিবৃতির পাঁচ দিন পর জেএসডির আ স ম রব একটি পরিকল্পনাও উত্থাপন করেছেন। এদিকে সিপিবি এসব রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও তাদের উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান জাতীয় সরকারের পক্ষে এক টিভি টকশোয় মত দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও বলছেন, এই দাবিতে বামপন্থিসহ সরকারবিরোধী সব দলকে এক প্ল্যাটফরমে নিয়ে আসার চেষ্টা তারা করছেন। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও এভাবে জাতীয় সরকারের একটি তৎপরতা পর্দার অন্তরালে জোরেশোরে চলেছিল।

এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দলের অনেকে পাকড়াও হলেও দেশজুড়ে যখন প্রশংসিত হচ্ছিল এবং মানুষ আশার আলো দেখছিল তখন দেশের শীর্ষ মেধাবীদের বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে ছাত্রলীগের একদল নির্দয় খুনির হাতে আবরার ফাহাদ নামের এক মেধাবী ছাত্রের নৃশংস হত্যাকা  গোটা দেশকে বিষাদগ্রস্ত ও বেদনার্ত করে দেয়। অতীতেও সব সরকারের আমলে শিক্ষাঙ্গনে ভয়াবহ সন্ত্রাস ও হত্যাকা  ঘটলেও নিহতদের পরিবার খুনের বিচার পায়নি। বরাবরই শাসকদলের সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় পেয়েছে। এবারই প্রথম শেখ হাসিনার সরকার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ থেকে খুনিদের বহিষ্কারই করেনি, পুলিশ তাদের আটক করে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে। দ্রুত এই মর্মান্তিক হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বুয়েট প্রশাসন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের সব দাবি মেনে নিলেও আন্দোলন না থামায় ষড়যন্ত্রের আলামত দেখা যাচ্ছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির বুয়েট ইস্যুকে গরম করে দাবানলের আগুন ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার প্রশাসনিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সেই সুযোগটি তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।

বিএনপি ও জামায়াতের সাইবার ফোর্স সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী বিভিন্ন অপপ্রচার, ভারতবিরোধী পুরনো জিকির, ইমরান খানের পক্ষে স্তুতিবাক্য এবং শেখ হাসিনার পক্ষের দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গের চরিত্রহননের মিথ্যা প্রচারণায় শক্তিশালীভাবে মাঠে নেমেছে।

শুধু তাই নয়, যে সময় শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৮-এ নিয়ে এসেছেন, পৃথিবীর সামনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিস্ময়কর জায়গায় নিয়ে গেছেন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে  যাতে কোনো লুটপাট না হয়, সুশাসন নিশ্চিত হয় সেই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তখনই নানামুখী ষড়যন্ত্রে অনেকে লিপ্ত হয়েছেন। দেশে অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখা শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী সমাজ থেকে দলের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার গভীর চক্রান্ত চলছে। দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, যা কিছু ঘটছে শেখ হাসিনা অবহিত আছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রশ্নে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর জিরো টলারেন্স নীতির মতো দুর্নীতিবিরোধী অভিযানও অব্যাহত থাকবে। এতে জনগণের সমর্থন যেমন তাঁর প্রতি বাড়বে তেমনি তিনি তাঁর দুঃসময়ের দলের নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মিত্রদের দূরে সরে যেতে দেবেন না। দলের বিতর্কিতদের সরিয়ে ক্লিন ইমেজের নির্লোভ নেতৃত্বে দলকে সারা দেশে ঢেলে সাজাবেন।

বিএনপি তাদের কারাবন্দী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সামনে রেখে আগামীতে সরকারবিরোধী একটি আন্দোলন গড়ে তোলার শেষ চেষ্টা শুরু করেছে। সরকারের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেও বিষয়টি রয়েছে। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ থাকলেও, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সক্রিয় হলেও বিএনপির রাজনীতির নাটাই লন্ডনে বসে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও যাবজ্জীবন দে  নির্বাসিত তারেক রহমান ঘোরাচ্ছেন। দেশ-বিদেশে বিএনপি ও জামায়াতের নানামুখী প্রচারণা ও তৎপরতা যেমন অব্যাহত রয়েছে, চলছে অপপ্রচার তেমনি ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের দেশের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তৎপরতা। সরকারবিরোধী একটি ইস্যু সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে শক্তিশালী আন্দোলনের ডাক এলে সব শক্তি সুসংহতভাবে মাঠে নামবে। ইতিমধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাপ্রধান কর্নেল (অব.) ইসাহাক মিয়াকে যে ইমেইল আদান-প্রদানের সূত্রে আটক করা হয়েছে, সেটিও ইঙ্গিতবহ।

কোনো সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তার দলের নেতা-কর্মীদের পাকড়াও দূরে থাক অতীতে দেখা গেছে, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তাঁর দলের অনুপ্রবেশকারী অশুভ শক্তির পাশে মাঠের ত্যাগী কর্মীরাও রেহাই পাননি। কিন্তু বিরোধী দল বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এটিকে স্বাগত জানানো দূরে থাক বরং সরকারের ইমেজ বিতর্কিত করার বক্তব্যই দিয়ে আসছে। শেখ হাসিনার দল ও প্রশাসনের মধ্যে এমনকি ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে বিভক্তির সুচতুর সীমারেখা টেনে দিতে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মহাজোটের নেত্রী শেখ হাসিনার বিরোধী সব শক্তিই ক্রমে এক প্ল্যাটফরমের দিকে ঝুঁকছে। ধীরে ধীরে তারা তাদের নানামুখী প্রচার-অপপ্রচার দেশ-বিদেশে শুরুই করেনি লবিংও চালু করেছে। কূটনৈতিক যোগাযোগও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক শক্তি, গণসমর্থন ও ব্যবসায়ী সমাজসহ সব পেশার মানুষকে সুসংহত করবেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে যে আনুগত্য নিয়ে রয়েছে সেটি তাদের কর্মকা  ও বক্তব্যে দিনের মতো পরিষ্কার।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর