বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আত্মঘাতী উন্নয়ন প্রকল্প চাই না

নিজস্ব প্রতিবেদক

আত্মঘাতী উন্নয়ন প্রকল্প চাই না

ড. ইফতেখারুজ্জামান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ আমাদের জন্য অপরিহার্য। বিদ্যুৎ অবশ্যই উৎপাদন করতে হবে। তবে তা আত্মঘাতী প্রক্রিয়ায় নয়। আত্মঘাতী কোনো উন্নয়ন প্রকল্প চাই না।’ গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি ও ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশ যৌথভাবে এর আয়োজন করে। বাপা সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবদুল মতিন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শারমিন মুরশিদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একটাই বাংলাদেশ, একটাই কক্সবাজার, একটাই সুন্দরবন। এদের রক্ষা করতে হবে।

 এদের বিপন্ন করে, পরিবেশ বিপন্ন করে কোনো প্রকল্পই গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প আমাদের টেকসই উন্নয়নের পরিপন্থী। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সরকারের অঙ্গীকার রয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার হবে ১০ শতাংশ। বর্তমানে এটি রয়েছে ৪ শতাংশ। ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলেছে সরকার। তাই কয়লা পরিহার করে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে হবে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। শুধু বায়ু ব্যবহার করে ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এটি না করে বিভিন্ন দেশের কাছে জিম্মি হয়ে থাকছি আমরা; যা গ্রহণযোগ্য নয়।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বৈশি^ক ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দ্রুত হারে দূষণের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কয়লা পরিহার করে বিকল্প পথে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে হবে। নবায়নযোগ্য প্রক্রিয়ার দিকে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প স্থগিত রেখে এটি নির্মোহভাবে বিশেষজ্ঞ দ্বারা মূল্যায়ন করতে হবে। যদি প্রমাণিত হয় যে, আসলেই প্রকল্পটি ক্ষতিকর নয়, পরিবেশের জন্য ঝুঁকি নেই, তবে আমরা প্রতিবাদ বন্ধ করব।’ ‘মার্কেট ফোর্সেস এবং থ্রি-ফিফটি’ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬৩ গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনায় বড় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে চীন, যুক্তরাজ্য, জাপান ও ভারতের মতো বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র। বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রমবর্ধমান বিদেশি অর্থায়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১টি থেকে বাড়িয়ে ৩০টিতে উন্নীত করা হবে। বিদ্যমান ৫২৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৩ হাজার ২৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত করবে, যা বায়ুম লে বার্ষিক ১১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত কার্বন-ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করবে। এটি সত্যিকারভাবে একটি কার্বন বিস্ফোরণের ঘটনা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে, দেশ ১১ শতাংশ স্থলভাগ হারাবে এবং ৪ ও ৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ঝুঁকি ১৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে। কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিপর্যয় বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশকে গভীর সংকটে ফেলে দেবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর