শিরোনাম
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
সম্মেলন আর মাত্র ৩ দিন

টানটান উত্তেজনা আওয়ামী লীগে

সহ-সম্পাদক পদ থাকছে না

জিন্নাতুন নূর ও রফিকুল ইসলাম রনি

টানটান উত্তেজনা আওয়ামী লীগে

সহযোগী সংগঠনে শীর্ষ নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তনের পর টানটান উত্তেজনার মধ্যে আর মাত্র তিন দিন পর শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। নতুন নেতৃত্বে আসছেন কারা-এ আলোচনা সর্বত্র। সম্মেলন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দলটির সভানেত্রী পদে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই থাকছেন। সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে তেমন আলোচনা না থাকলেও অন্য পদগুলোতে কারা আসছেন তা নিয়ে আগ্রহী কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চমক আসতে পারে। অন্য পদগুলোতে কারা আসছেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই চান শুদ্ধি অভিযানের ভিতরে দিয়ে হতে যাওয়া সম্মেলনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন। বিশেষ করে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর যারা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন তারা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসুক-এরকম চাওয়া নেতা-কর্মীদের। এ সম্মেলনের পর থাকছে না আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদকের পদ। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা হয়েছে সম্মেলন মঞ্চ। মঞ্চ সাজসজ্জা উপ-কমিটির নেতারা নিয়মিত সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করছেন। এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আগত নেতাদের মোরগ পোলাও খাওয়ানো হবে। আগামী বছর থেকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করায় এবার সম্মেলনে রাজধানী ঢাকাকে অপরূপ সাজে সাজানো না হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানটি সাজানো হয়েছে বর্ণিল। দলীয় সূত্রমতে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সবার আগ্রহ আওয়ামী লীগের আগামী নেতৃত্ব নিয়ে। কারা আসছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে? কারা বাদ পড়ছেন। পদপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতারাও দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে ভিড় করছেন। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এবার প্রেসিডিয়াম থেকে বেশ কয়েকজন নেতা বাদ পড়তে পারেন। একইভাবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞদের নিয়ে আসা হতে পারে। দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে চমক আসতে পারে। এ পদে দেখা যেতে পারে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা নায়ক আলমগীরকে। তিনি ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে তার। মাঠের কর্মীদের চাওয়া কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এবার ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন হোক। জায়গা হোক জেলা-উপজেলার ত্যাগী নেতা-কর্মীদের। যোগ্যতা থাকার পরও নানা কারণে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুদ্ধি অভিযানের ভিতর দিয়ে হতে যাওয়া আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আশাবাদী তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। আমরা চাই যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন হোক। আমাদের বিশ্বাস যারা যোগ্যতা থাকার পরও দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত তাদের মূল্যায়ন করা হোক।’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও এবার দলকে নতুনভাবে সাজাতে চান বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলকে নতুনভাবে সাজাতে চান। আমরা সেভাবেই কাজ শুরু করেছি।

থাকছে না সহ-সম্পাদক পদ : অবশেষে তুলে দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক বা বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য পদ। আগামী সম্মেলনের পর এই পদে আর কাউকে রাখা হচ্ছে না। নবীনদের দলে সক্রিয় রাখতে এবং ‘পরিচয়’ দিতেই ২০১২ সালে এই পদটি সৃষ্টি করা হয়। সে সময়ে ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ৬৬ জনকে সহ-সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর কয়েক মাসের মাথায় এক ধাপে ৪৬৭ জনে দাঁড়িয়েছিল। ২০১৩ সালে ভোটের আগে গণহারে সহ-সম্পাদক করা হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের একদিন বলেছিলেন, যার গায়ে ধাক্কা লাগে সে-ই সহ-সম্পাদক। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে সদস্য করা হয়। বিষয়ভিত্তিক কয়েকজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ যায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। আবার কমিটির সদস্য হয়েই ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে ওই নেতারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নিজেদের কেন্দ্রীয় নেতার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অফিসে ও দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে দাপট দেখান। থানা ও প্রশাসনে গিয়ে তদবির করেন। বিষয়টি দলীয় সভানেত্রীর কান পর্যন্ত গড়ায়। ফলে আগামীতে সহ-সম্পাদক পদ তুলে দেওয়ার কথা জানান তিনি। গঠনতন্ত্রে সেই সংশোধনী আনা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে গঠনতন্ত্র সংশোধনী উপ-কমিটির সদস্য সচিব এবং দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী সম্মেলনের পর থেকে সহ-সম্পাদক পদটি বাতিল করা হচ্ছে। আমরা গঠনতন্ত্রে সে সংশোধনীর প্রস্তাব করেছি।

বর্ণিল সাজে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান : গতকাল সরেজমিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, বহমান পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। নিচের জলরাশিতে ভাসমান বিশাল পাল তোলা নৌকা। সেই নৌকায় লেখা ২১তম জাতীয় সম্মেলন-২০১৯। এর ঠিক পেছনেই আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশাল ছবি। আরও আছে জাতীয় চার নেতা ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ছবি। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের মূল মঞ্চ এভাবেই তৈরি করা হয়েছে। সন্ধ্যায় সম্মেলনস্থল অর্থাৎ গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নানা বর্ণিল আলোর ঝলকানিতে হয়ে ওঠে আলোকিত। এলইডির ডিসপ্লেতে ভেসে ওঠে জাতীয় পতাকা, বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভেসে ওঠে।

আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২১তম সম্মেলনের জন্য ইভেন্ট খোলা হয়েছে। সম্মেলনস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি মঞ্চের অংশবিশেষ। আওয়ামী লীগের নেতাদের সংবাদপত্রে প্রকাশিত পুরনো ছবি সংবলিত ব্যানার। তিন দিন বাদেই আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। ২০ ডিসেম্বর বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধন। পরদিন ২১ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে কাউন্সিল অধিবেশন। সম্মেলন সফল করতে গঠিত ১১টি উপ-কমিটির নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। সারা দেশ থেকে সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর এবং ১৫ হাজার ডেলিগেটসহ ৫০ হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপ-কমিটির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আগামীকালের মধ্যে মঞ্চের সাজসজ্জা শেষ করা হবে। ১৬ ডিসেম্বর থেকে চার দিন সাধারণ মানুষের জন্য মঞ্চ উন্মুক্ত রাখা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং সরকার ঘোষিত মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন শুরু হওয়ায় এবার সম্মেলনের সাজসজ্জায় খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ হবে না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মঞ্চ এবং সাজসজ্জা উপ-কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক জানান, আগামী বছর থেকে মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন শুরু হবে। এ জন্য জাতীয় সম্মেলনে শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সাজসজ্জা সীমাবদ্ধ থাকছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও মঞ্চ এবং সাজসজ্জা উপ-কমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম জানান, পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা হচ্ছে সম্মেলনের মূল প্যান্ডেল। আওয়ামী লীগের এ পর্যন্ত হওয়া সব সম্মেলনের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়। খাদ্য উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্মেলনে খাবারের মেনু হিসেবে থাকছে মোরগ পোলাও, ফিন্নি, কোমল পানীয়, ডিম। সম্মেলনে আগত ৪০ হাজার দলীয় নেতা-কর্মীকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি খাবার তৈরি করা হবে। সম্মেলনের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মকান্ডে র  সমন্বয়ে নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপার নেতৃত্বে দলীয় নৃত্য পরিবেশিত হবে। ২০০ শিল্পী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এই সাংস্কৃতিক আয়োজন তত্ত্বাবধান করছে। এ ছাড়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও বর্তমান প্রজন্মের তরুণ শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।

সর্বশেষ খবর