সোমবার, ১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই পাওয়া আসলাম খুনের মামলায় আটক

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেব ফকির হত্যা মামলার প্রধান আসামি, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত (পরে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় মুক্ত) উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আসলাম ফকিরকে (৫০) আটক করেছে র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা। একটি হত্যা মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে।

র‌্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক দেবাশিষ কর্মকার জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে গ্রামবাসীর বিরোধে খুন হন শহিদুল ইসলাম শহিদ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিহতের চাচা বাদী হয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা আসলাম ফকিরকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২১ এপ্রিল রাতে লক্ষ্মীপুর গ্রামের লতিফ মাতুব্বরের ঘরের টিনের চালের পানি পড়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরই জেরে আসলাম ফকির ও উসমান ফকিরের নেতৃত্বে এবং হুকুমে আসামিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় রফিক মাতুব্বরের ওপর। পরে শহিদ মাতুব্বর এগিয়ে এলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনায় আসলাম ফকিরকে প্রধান আসামিসহ ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫/২০ জনের নামে একটি হত্যা মামলা করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে আসলাম ফকির পলাতক ছিলেন। র‌্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যশোর জেলার চৌগাছা থানার কলেজ রোড এলাকার একটি বাসায় গতকাল ভোরে অভিযান চালায়। এ সময় সেই বাসা থেকে আটক করা হয় আসলাম ফকিরকে। আসলাম বিদেশ ফেরত হিসেবে পরিচয় দিয়ে ওই এলাকায় বাসা ভাড়া নেয়। সে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলেও র‌্যাব জানায়। আসলাম ফকির বেশ কয়েকবার তার অবস্থান বদল করে র‌্যাবের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আসছিলেন। আটক আসলাম ফকিরকে ভাঙ্গা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম শাহেদ আলী ওরফে সাহেব ফকির হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে আসলাম ফকিরকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত। পরবর্তীতে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করলে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও তা নাকচ হয়। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর আসলাম ফকিরের ফাঁসি কার্যকরের দিন ধার্য করা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠি দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়। পরিবারের সবাইকে আসলাম ফকিরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু ফাঁসির সবকিছু ঠিক থাকলেও ফাঁসির এক দিন আগে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে আসলাম ফকির। ফলে তার ফাঁসি স্থগিত হয়ে যায়। ওই দিনই দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন তিনি। এরপর সাধারণ ক্ষমায় তার ফাঁসির দন্ড মওকুফ করে ১৪ বছরের সাজা দেওয়া হয়। কারাগারে ভালো আচরণের কারণে সাজা কমিয়ে দিলে ১৩ বছর ২ দিন কারাভোগের পর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট গাজীপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান আসলাম ফকির। মুক্তি পেয়ে ফের এলাকায় রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। জড়িয়ে পড়েন পুরনো বিবাদে। সেই বিরোধের জের ধরে বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতিপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষে লিপ্ত হন তিনি ও তার সমর্থকেরা। এ বিরোধের জেরে সম্প্রতি খুন হন প্রতিপক্ষের শহিদুল ইসলাম শহিদ। সেই মামলার প্রধান আসামি করা হয় আসলাম ফকিরকে। আসলাম ফকির ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা হলেও লেখাপড়া ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পার্শ্ববর্তী সদরপুর উপজেলায়। তিনি সদরপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। আসলাম ফকির আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

সর্বশেষ খবর