মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের নারী ও মানব পাচার চক্রের অন্যতম হোতা আজম খান ওরফে ডন আজিমের শুধু অপরাধজগৎ নয়, রাজনীতিতেও ছিল সমান প্রতাপ। নারী ও মানব পাচার চক্রের এ মাফিয়ার সঙ্গে ছিল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সদস্যসহ অসংখ্য প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের সখ্য। তাই ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা চালাতেন বিএনপির তৃণমূলের রাজনীতিতে। এ মাফিয়ার দাপটে ফটিকছড়ি বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ছিলেন একরকম তটস্থ। প্রতাপের কারণেই বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসনে বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপির মনোনয়ন। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব রহমান শামীম বলেন, ‘আলোচিত আজম খান বিএনপির কোনো পদে নেই। গ্রেফতার হওয়ার পর তার নাম প্রথমবারের মতো শুনি। গণমাধ্যমে তার ছবি প্রথমবারের মতো দেখি।’ এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘জিয়া আদর্শ একাডেমি নামে বিএনপির কোনো অঙ্গসংগঠন নেই। শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতার সঙ্গে আজমের সম্পর্ক আছে কিনা তাও জানি না। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
ফটিকছড়ি বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর বলেন, ‘আজম খান ফটিকছড়ি বিএনপির কোনো পদে নেই। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন না। তবে কিছু কর্মী বিভিন্ন উৎসব ও দিবসে তার পক্ষে পোস্টার ও ব্যানার সাঁটাত বলে শুনেছি।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে নারী ও মানব পাচার চক্রের অন্যতম সদস্য আজম খান ওরফে মোজাহের ওরফে ডন আজিমের রাজনীতির হাতেখড়ি জামায়াত-শিবিরের মাধ্যমে। আমিরাতে পালিয়ে যাওয়ার পর সখ্য গড়ে ওঠে বিএনপির প্রভাবশালী এক রাজনীতিবিদের সঙ্গে। তার মাধ্যমেই বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন আজম খান। আমিরাতে বেড়াতে যাওয়া বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের খাতির-যত্ন করে তাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন ধূর্ত আজম খান। বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতার সঙ্গে রয়েছে তার সুসম্পর্ক। রাতারাতি হয়ে যান বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। হয়ে যান ‘জিয়া আদর্শ একাডেমি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি। এ সংগঠনের নামে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আয়োজন করেন নানা অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানগুলোয় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় অনেক প্রভাবশালী নেতা উপস্থিত ছিলেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফটিকছড়ি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালান আলোচিত এ নারী ও মানব পাচারকারী। কিন্তু তৃণমূলের প্রতিবাদের মুখে শেষ মুহূর্তে মনোনয়নবঞ্চিত হলেও পরবর্তী নির্বাচনকে টার্গেট করে চালাতে থাকেন রাজনৈতিক কর্মকান্ড। বিভিন্ন দিবস ও ধর্মীয় উৎসবে আজম ফটিকছড়িবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার-পোস্টার সাঁটাতে থাকেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। করোনা প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিতে নিজেকে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা দাবি করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দান-খয়রাত করেন আজম খান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফটিকছড়ি বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘আজম খান বিএনপির কোনো পদে না থাকলেও নিজেকে প্রভাবশালী নেতা দাবি করতেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবিগুলো দেখিয়ে বলতেন, এসব নেতা তার টাকায় চলেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চাইলেও বঞ্চিত হন আজম। আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে এগোতে থাকে তার কর্মকান্ড। তার প্রভাবে তৃণমূলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা ছিলেন তটস্থ।’