বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ জরুরি

মাহমুদ আজহার

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ জরুরি

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে এখন মেগা প্রজেক্টের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করা যেতে পারে। এতে অর্থনীতিতে তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কিন্তু ক্ষুদ্র, মাঝারি বা বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানাগুলো দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বন্ধ থাকলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। করোনাকালে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে ফোনালাপে এসব কথা বলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বস্তুত অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই মেগা প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করে বাজেটে বরাদ্দ হওয়া ওইসব টাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ করা উচিত। এতে অর্থনীতির চাকা সচল হবে। যখন বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াবে, সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তখন মেগা প্রকল্পগুলোতে নজর দিতে পারে সরকার। তিনি বলেন, করোনাকালীন এই সময়ে মানুষের হাতে এখন মৌলিক চাহিদা পূরণের টাকাও নেই। অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে হলে মানুষের হাতে এখন নগদ টাকা থাকা জরুরি। শুধু ঈদের বকশিশ নয়, প্রাপ্যতা অনুযায়ী জনগণকে নগদ টাকা দিতে হবে। বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ এখন খাদ্য ও অর্থ সংকটে আছে। তাদেরকে উৎপাদন, চাহিদা ও খরচ করতে আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সরকারের কোষাগারের টাকা জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। এটা জনগণকে দয়া নয়, এটা তার অধিকার। 

বিএনপির এই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সদস্য বলেন, মেগা প্রকল্প নিয়ে বিদেশি যাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তারাও জানেন, করোনা পরিস্থিতিতে কোনো দেশই ভালো নেই। রাশিয়া, চীন, ভারতসহ সবাই জানে বিশ্ব অর্থনীতির কী অবস্থা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধবিগ্রহ বা এমন বৈরী পরিস্থিতিতে এসব চুক্তি সাময়িক স্থগিত রাখার বিধান আছে। এসব চুক্তি পরে নতুন করে মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। কম টাকায় চুক্তি করা যেতে পারে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মেগা প্রজেক্টগুলো এখন সচল রাখার অর্থ হচ্ছে, এখান থেকে বড় অংকের টাকা একটি গোষ্ঠী মেরে দিচ্ছে। প্রভাবশালী ওই গোষ্ঠী টাকা বাইরে পাচার করে দিচ্ছে। কিন্তু জনগণের চাহিদা তাদের মাথায় নেই। এটা যদি সরকারের মাথায় থাকত তাহলে মেগা প্রজেক্টগুলো স্লো করে দিয়ে দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারিসহ সব ধরনের শিল্প কলকারখানা সচল রাখত। দুর্ভাগ্য হলো, করোনাকালীন বাজেটে বড় প্রজেক্টগুলো সচল রাখতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে বিনা সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে হবে। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের বিল নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝামেলা করা যাবে না। তাদের কাছে ভুতুড়ে বিল দেওয়া যাবে না। তাদের এখন কর বা ভ্যাটের বেড়াজালে ফেলানো যাবে না। এতে যে কর্মসংস্থানগুলো ছিল, তা ফিরে আসবে। স্বাভাবিক উৎপাদন হবে। আবার নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টিও হবে। এতে অর্থনীতি নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। যারা যত বেশি কর্মসংস্থান বাড়াবে, সরকার তাদের তত বেশি প্রণোদনা দিতে পারে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বড় শিল্পগুলোকে বাঁচাতে সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু এই প্রণোদনা তাদের হাতে যাচ্ছে না। সরকারদলীয় লোকজনের হাতে যাচ্ছে। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ব্যাংক লুটেরার মতো এই টাকার বড় অংশই বিদেশ চলে যাবে বলেও জনগণ আশঙ্কা করছেন। সরকারের উচিত, স্বচ্ছতার মাধ্যমে প্রণোদনা দেওয়া। প্রয়োজনে ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা উচিত।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনায় আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাত বলতে কিছু নেই। এ খাতে সবকিছুই ভঙ্গুর প্রায়। অব্যবস্থাপনা, অযোগ্যতা ও চরম দুর্নীতির মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সব নাগরিককে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। বিনা পয়সায় জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সর্বজনীন করতে হবে। কারণ, এটা জনগণের অধিকার। সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি খাতেও সরকারকে বড় ধরনের সহযোগিতা করতে হবে। কৃষি খাত কোনোভাবেই যেন তারল্য সংকটে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সবার জন্য সুস্বাস্থ্য ও সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে বাগাড়ম্বর করছে। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল টেলিকম ইউনিটি (আইটিইউ) রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। তারা স্বাস্থ্য খাত নিয়ে যেমন বড় বড় কথা বলছে, একই অবস্থা আইটি সেক্টরেও। আর্থিক খাতসহ মেগা প্রজেক্টে একই অবস্থা।

সর্বশেষ খবর