রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর

ফখরুলের নিন্দা, বিএনপি কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ, ফাঁকা গুলি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর

কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার রাতের আঁধারে ওই ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখম-ল ও বাঁ হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলা হয়েছে। গতকাল সকালে বিষয়টি গোচরীভূত হলে শহরের বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট চত্বর ও থানা মোড়ে আওয়ামী লীগ, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করে। কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পৌরসভার উদ্যোগে শহরের ব্যস্ততম পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে গত মাসে। তিনি জানান, একই বেদিদে বঙ্গবন্ধুর তিন ধরনের তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এ বেদিতে জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্যও থাকবে। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ সম্পন্নের পথে। হঠাৎ করে শুক্রবার দিবাগত রাতে দুবর্ৃৃত্তরা ভাস্কর্যটির ডান হাত, পুরো মুখম-ল ও বাঁ হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলে। গতকাল সকালে এ ঘটনা জানাজানি হলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঘটনার  প্রতিবাদে সকালে আওয়ামী লীগ, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করে। ভাস্কর্যটির ভাস্কর মাহাবুব জামান শামীম জানান, তারা দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিভিন্ন ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। এ কারণে সব সময় তাদের একটি মহলের চাপে থাকতে হয়। কুষ্টিয়ার এ ভাস্কর্যটি ছিল বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের প্রতীক। যারা ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক কারশেদ আলম জানান, এটি খুবই গর্হিত অপরাধ। মৌলবাদী অপশক্তি এসব করে দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এদের সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত জানান, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর, ফাঁকা গুলি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তা মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের সামনে ফাঁকা গুলি ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।

জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবদুুর রাজ্জাক বাচ্চু অভিযোগ করেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় অফিসের চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ জানান, দুপুরে কার্যালয়ে বৈঠকের পর বেলা ৩টার দিকে নেতা-কর্মীরা কার্যালয় ছেড়ে বাড়ি যান। কার্যালয় খোলা ছিল, সেখানে শুধু একজন পিয়ন ছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে জানতে পারেন কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। এদিকে ভাঙচুর হওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সামনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফাঁকা গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। পরে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ছাই রঙের একটি নোহা গাড়ি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তা মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সামনে আসে। এ সময় গাড়ির ভিতর থেকে এক ব্যক্তি অস্ত্র বের করে ফঁাঁকা গুলি ছোড়েন। এরপর দ্রুত তারা গাড়ি নিয়ে চলে যান। এ ঘটনা সেখানে উপস্থিত পুলিশ লাইনসের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মকছেদুর রহমান সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন। তবে তিনি তাদের আটকাতে পারেননি।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের নিন্দায় মির্জা ফখরুল : কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দলটির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ নিন্দা জানান। বিবৃতিতে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, বিকালে ছাত্রলীগের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী কোনো কারণ ছাড়াই মিছিল সহকারে প্রকাশ্যে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

 তিনি বলেন, দেশ পরিচালনায় ও জনসমস্যা নিরসনে সীমাহীন ব্যর্থতা এবং দুর্নীতি, লুটপাট, দুঃশাসন আড়াল করতে আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে সংঘাত সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ কারণেই সংঘাত ও বিবাদ সৃষ্টি করতে উসকানিমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। গত সপ্তাহে মাগুরা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালানোর পর এবার বিনা কারণে আকস্মিকভাবে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর