প্রথম ধাপের ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে আগামী ১৩ মার্চ দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডেকেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল থেকে দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে অংশ নিতে ইচ্ছুক অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থী এখন ঢাকায়। নৌকা বাগিয়ে নিতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা। দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাসাবাড়িতে ধরনা দিচ্ছেন। পৌর ভোটের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিতর্কিতদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন দলের হাইকমান্ড। প্রথম ধাপে আগামী ১১ এপ্রিল সারা দেশে ৩৭১ ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। ১৮ মার্চ পর্যন্ত সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৯ মার্চ বাছাই এবং ২৪ মার্চ প্রত্যাহারের শেষ দিন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে একটি চিঠি পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ। চিঠিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ২৮(৩)(ঙ) অনুযায়ী আগ্রহী প্রার্থীদের প্যানেল তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা আয়োজন করবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থীদের একটি প্যানেল সুপারিশের জন্য কেন্দ্রে পাঠাবে। ওই প্যানেলকে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সইয়ে নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে যেসব ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করা হবে সেসব জায়গা থেকে ইতিমধ্যে স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী কিংবা প্রভাবশালী নেতাদের ‘পছন্দের’ লোককে প্রার্থী করার অভিযোগ উঠেছে। ব্যক্তি পছন্দে করা হচ্ছে দলীয় প্রার্থী। এতে যারা দুঃসময়ে দল করেছেন, কিংবা ত্যাগী, জনগণের কাছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে তারা বাদ পড়েছেন। হাইব্রিড ও জনবিচ্ছিন্নদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। প্রার্থী বাছাইয়ের নামে ‘লোক’ দেখানো ভোট করা হচ্ছে। এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা যাকে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন তাকেই ‘নানা’ প্রক্রিয়ায় প্রার্থী করে কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। আবার কাউকে মৌখিকভাবে ‘বিদ্রোহী’ বলেও দলীয় মনোনয়ন ফরম গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্রমতে, দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিলেও এটাকে নতুন কৌশল হিসেবে ভাবছে ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারকরা। সে কারণে বিতর্কদের ব্যাপারে পৌরসভা ভোটের মতোই কঠোর অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির হাতেই নৌকা তুলে দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গতবার যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তারা মনোনয়ন পাবেন না। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রার্থী যাচাই-বাছাই করা হবে। বিভিন্নভাবে প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হচ্ছে। তৃণমূল যেসব নাম পাঠাবে, সেগুলো উপজেলায় যাবে, সেখান থেকে যাবে জেলায়। জেলা থেকে কেন্দ্রে আসবে তালিকা। তারপর কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করবে।’
বিদ্রোহীদের নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, যারা বিগত সময়ে দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি, পারে দলের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রার্থী হয়েছিলেন তারাই বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হবেন। এখানে কারও ইচ্ছেমতো বিদ্রোহী সংজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা মনোনয়ন চাননি, তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন- এটা বলার সুযোগ দেখছি না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা বিএনপির নতুন কৌশল। তারা জনগণকে ভয় পায় বলেই ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও আমরা দলীয় প্রতীকেই এবং একক প্রার্থী দেব। যারাই নৌকার বিরোধিতা করবে তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।’ তিনি বলেন, বির্তকিত কেউ যেন মনোনয়ন না পায় সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। প্রভাব ঘাটিয়ে কিংবা কৌশল অবলম্বন করে ‘জনবিচ্ছন্ন’ কিংবা হাইব্রিডদের নাম কেন্দ্রে পাঠালেও দল সঠিক ব্যক্তিকেই মূল্যায়ন করবে।’