শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

দীর্ঘ পরিকল্পনায় মিতু খুন

নিজেকে রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা এসপি বাবুলের, চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পেয়েছে পিবিআই

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দীর্ঘ পরিকল্পনায় মিতু খুন

কয়েক মাস পরিকল্পনার পর সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার খুন করেন স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। শুধু পরিকল্পনা নয়, খুনের পর প্রতিটি ধাপে চেষ্টা করেছেন প্রমাণ ও আলামত ধ্বংসের। খুনের পাঁচ বছরের মাথায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইর চৌকষ কর্মকর্তাদের হাতে পড়ে পাল্টে যার মামলার গতি। তাদের তদন্তে বের হয়ে আসে থলের বিড়াল। বাদী থেকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় সাবেক এই পুলিশ সুপারকে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘দীর্ঘ পরিকল্পনার পরই বাবুল আক্তার এ খুন করেছেন। খুনের পর তার প্রচেষ্টা ছিল আলামত ও প্রমাণ ধ্বংসের। কিছু ক্ষেত্রে তিনি সফলও হয়েছেন। তার পরও পিবিআইর কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে; যা দিয়ে এ খুনের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা সহজেই প্রমাণ করা যাবে।’ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মিতুকে খুনের পর বাবুল এমন অভিনয় করেন কারোর বোঝার উপায় ছিল না এ খুনে তার সম্পৃক্ততা। আচরণ দেখে উল্টো তাকেই সান্ত্বনা দিতে হয়েছে আমাদের। পরে বুঝি নিজেকে রক্ষা করার কৌশল ছিল এটি।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবুল আক্তারের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি হওয়ার পর থেকে মিতুকে খুনের পরিকল্পনা করেন বাবুল। প্রায় ছয় মাস আগে থেকে এ খুনের পরিকল্পনা করা হয়। নিখুঁতভাবে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ‘পারফেক্ট ক্রাইম’ শীর্ষক অনলাইন কোর্সও করেন বাবুল। কিলিং মিশন সফল করতে এবং প্রশাসনের নজর এড়াতে দফায় দফায় মুছার সঙ্গে বৈঠক করেন। কিছু কিছু আলাপ-আলোচনা করেন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। নিজেকে আড়াল করতে ঘটনার পর থেকে কান্নার মেকি আবহ তৈরি করেন। খুনের জন্য জঙ্গি সংগঠনকেও দায়ী করতে থাকেন। এমনকি মিতুর দাফনের পর ওঠেন শ্বশুরের বাসায়। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছার সঙ্গে যোগাযোগে ব্যবহার করা মোবাইল সেট সুপরিকল্পিতভাবে নষ্ট করা হয়েছে। ডিলেট করে দিয়েছেন মুছার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের আলাপ। ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু বাবুল আক্তার সুপরিকল্পিত ও নিখুঁতভাবে করার পরও পিবিআইর তদন্তে বের হয়ে আসে থলের বিড়াল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘মিতু খুনের পর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত ছিল পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তখন এজাহারও তৈরি করা হয়। কিন্তু এতে বাদ সাধেন বাবুল। তার জোরাজুরিতে ঘটনার এক দিন পর বাবুল বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে খুনের মামলা দায়ের করেন। মূলত নিজেকে রক্ষা করতেই এ কৌশল অবলম্বন করেন বাবুল।’ প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন মহানগরের জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে মহানগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পাঁচ বছর পর পিবিআইর তদন্তে এ খুনে বাবুল আক্তারের সংশ্লিষ্টতা পায়। পরে পুরনো মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে নতুন করে মামলা দায়ের হয়। যাতে আসামি করা হয় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর