সোমবার, ২৪ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মিরপুরে হত্যায় বন্দুকযুদ্ধে আরেকজন নিহত

তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, আউয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিরপুরে হত্যায় বন্দুকযুদ্ধে আরেকজন নিহত

সাহিনুদ্দিন হত্যা

রাজধানীর মিরপুরে চাঞ্চল্যকর সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি মনির হোসেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। পল্লবীর সাগুফতা হাউজিং এলাকায় শনিবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। হত্যাকান্ডের ভাইরাল হওয়া ভিডিও বিশ্লেষণ করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩১ সেকেন্ডের মধ্যে সাহিনুদ্দিনকে মনির ২৭টি কোপ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে গ্রেফতার ১০ জনের মধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রকি, মুরাদ ও দিপু। তাদের জবানবন্দির বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হলো- পুরো কিলিং মিশনের বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন গ্রেফতার মোহাম্মদ সুমন। চারজন ভাড়াটে কিলার ছাড়াও তাদের নিজেদের বাহিনীর অন্তত আটজন ছিল কিলিং স্পটে। সুমন তাদের প্রত্যেককেই ১০ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক এমপি এম এ আউয়ালসহ নেপথ্য মদদদাতাদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। তদন্ত সূত্র বলছে, মিরপুর এলাকার রহস্যময় ক্ষমতার অধিকারী এক তরুণ কাউন্সিলরের ডান হাত হিসেবে এলাকায় পরিচিত মোহাম্মদ সুমন। ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ উত্তরের সাবেক সহ-সম্পাদক বর্তমানে ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা। সেই কাউন্সিলরের ছবি সংবলিত পোস্টার সাঁটানো মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সেই পোস্টার পোস্ট হিসেবে দিয়েছেন নিজের আইডি থেকে। সেই কাউন্সিলরের প্রচ্ছন্ন মদদে বেপরোয়া হয়ে উঠছিলেন সুমন, সোহাগ ও আড্ডু।

এদিকে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির পল্লবী জোনের এডিসি আহসান খান বলেন, ‘১৬ মে সাহিনুদ্দিন নিহত হওয়ার পর থেকেই আমরা মনিরকে খুঁজছিলাম। হত্যাকান্ডের পর সে লক্ষ্মীপুর চলে যায়। দুই দিন আগে সে ঢাকায় আসে।’

এডিসি বলেন, ‘হত্যাকান্ডের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেখানে দেখা যায় ৩১ সেকেন্ডের মধ্যে সাহিনুদ্দিনকে মনির ২৭টি কোপ দেয়। তাকে শনিবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে পল্লবীর ২২ তলা গার্মেন্টের পেছনে ঈদগাহ মাঠের পাশ থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রথমে ডিবির কাছে সে তিনটি কোপ দেওয়ার কথা স্বীকার করে। পরে  ভিডিও দেখালে পুরো ঘটনা স্বীকার করে সে।’ কী কারণে খুনের ঘটনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যারা দিয়েছে তাদের সবাই জড়িত থাকার কথা বলেছে। তবে অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ এখনো চলছে। অনেক তথ্য যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। এখনই মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনিরের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ‘‘মনির ডাকাতি ও ভাড়াটে কিলার হিসেবে কাজ করে। তার সহযোগীরা সাগুফতা হাউজিং এলাকায় আছে বলে আমাদের তথ্য দেয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে গভীর রাতে সেখানে গেলে সহযোগীরা ডিবিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। প্রাণ বাঁচাতে ডিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির একপর্যায়ে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। সহযোগীদের গুলিতেই মনির গুলিবিদ্ধ হন। পরে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও এক রাউন্ড গুলি এবং একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। ‘গোলাগুলির’ এ ঘটনায় ডিবির দুই সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় মামলা করা হয়েছে।’’ ১৬ মে পল্লবীতে শিশুসন্তানের সামনে সাহিনুদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ওই দিন বিকালে রাজধানীর পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর রোডে দুই তরুণ দুই পাশ থেকে এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছেন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটে পড়েন। এরপর হামলাকারীদের একজন চলে যান। অন্যজন মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তির ঘাড়ে কোপাতে থাকেন। র‌্যাব বুধবার গভীর রাতে নরসিংদীর ভৈরবে অভিযান চালিয়ে সাবেক এমপি আউয়ালকে এবং এর আগের রাতে চাঁদপুরের হাইমচর থেকে নূর মোহাম্মাদ হাসান (১৯) ও পটুয়াখালীর বাউফল থেকে জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবুকে (২৭) গ্রেফতার করে। সুমন ব্যাপারীসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ নিয়ে ওই হত্যায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হলো। তবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মিরপুরে ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মো. মানিক (৩২) এবং শনিবার দিবাগত গভীর রাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মনির। র‌্যাব ও ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে গতকাল শরিফ, ইকবাল ও টিটুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এর বাইরে আউয়াল, সুমন, হাসান ও বাবু ওরফে বাইট্যা বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর