রবিবার, ৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

চার কৌশলে চাঙা হবে অর্থনীতি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা মহামারীর প্রভাব থেকে দেশের অর্থনীতিকে চাঙা করতে চারটি কৌশল নিয়েছে সরকার। এগুলো হলো- ১. সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি ২. নিম্ন সুদে শিল্প ও সেবা খাতে ঋণ সুবিধা প্রদান ৩. অতিদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি এবং ৪. বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়ানো। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে এ কৌশলগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ বলছে, গত বছরের মার্চে কভিড-১৯ সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দফায় দফায় লকডাউনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদনে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে রাজস্ব ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। মহামারী মোকাবিলায় একদিকে সরকারকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে, অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সামগ্রিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হয়েছে। সংকটকালীন এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার চারটি কৌশল গ্রহণ করে, যা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

প্রথম কৌশলটি সম্পর্কে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের অর্থবছরে সরকারের ঋণ জিডিপির অনুপাতে কম থাকায় চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ ছিল। তবে সরকার প্রাথমিকভাবে অপচয় কমানোর পথে হাঁটে। এ লক্ষ্যে বিদেশ সফর ও অন্যান্য অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হ্রাস করা হয়। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প কাটছাঁট করা হয়। তবে নতুন অর্থবছরে অতিরিক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যয় বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সরকার মনে করছে ব্যয় বাড়ানোর মধ্য দিয়ে দেশে যে অতিরিক্ত ভোগ সৃষ্টি হবে তা উৎপাদনে গতি আনবে।

সরকারের দ্বিতীয় কৌশলটি হচ্ছে ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে নিম্ন সুদে শিল্প ও সেবা খাতকে ঋণ সুবিধা প্রদান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংক ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হয়েছে। প্রচুর তারল্য রয়েছে ব্যাংকগুলোয়। ফলে নতুন বিনিয়োগের জন্য শিল্পোদ্যোক্তাদের অর্থের সংকট হবে না। মূলধন ব্যয় কমায় উৎপাদনে খরচ কমবে। ফলে একদিকে যেমন নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে চাকরির বাজার শক্তিশালী হবে, অন্যদিকে পণ্যের উৎপাদন খরচ কমায় দেশে-বিদেশে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বজায় রাখতে পারবেন উদ্যোক্তারা।

কভিড-১৯-এর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের তৃতীয় কৌশলটি হচ্ছে অতিদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সম্প্রসারণ। এ কৌশলের লক্ষ্য হলো করোনার কারণে হঠাৎ বেকার হয়ে পড়া এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক সুরক্ষা দেওয়া। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের বাজেটের প্রায় ১৮ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা খাতে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের জন্য ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ভাতা প্রাপকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এত দিন ৮৮ লাখ গরিব ও অসহায় মানুষ এ ভাতা পাচ্ছিলেন। চলতি বাজেটে আরও প্রায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার গরিব মানুষ সরকারের সহায়তা পাবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ফলে সরকারি ভাতা পাওয়া গরিবের সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারের চতুর্থ এবং শেষ কৌশলটি হলো বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়ানো। অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকার প্রবাহ বাড়ালে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে এ কৌশলটি সতর্কতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যাতে টাকা সস্তা হয়ে না যায়। মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিআরআর অনুপাত ও রেপো রেট কমিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির দিকে নজর রেখে সামনের দিনগুলোতেও সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি বজায় রাখা হবে বলে জানিয়েছের সংশ্লিষ্টরা। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় সরকার এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকার ২৩টি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। ফলে অর্থনীতি চাঙা করতে সরকারের পুনরুদ্ধারমূলক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে, যা মধ্যমেয়াদে বাস্তবায়ন হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর