সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

সব খুলছে বুধবার থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

সব খুলছে বুধবার থেকে

দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করছে সরকার। সে অনুযায়ী ১১ আগস্ট থেকে সব সরকারি-আধাসরকারি- স্বায়ত্তশাসিত অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও শপিং মল খোলা থাকবে। একই সঙ্গে অর্ধেক গণপরিবহন শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি থাকবে। গতকাল এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার বা বিনোদন কেন্দ্র খোলার বিষয়ে আদেশে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন আদেশ অনুযায়ী, অফিস-আদালত ও দোকানপাট চালুর পাশাপাশি নির্দিষ্ট রুটে অর্ধেক গণপরিবহন চলবে। তবে আসনের সমপরিমাণ যাত্রী বহন করতে পারবে। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে কঠোর হওয়ার কথা  জানানো হয়। গত ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত কভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চলমান বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতায় নতুন করে আটটি শর্ত দিয়ে ১১ আগস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আটটি শর্তের মাধ্যমে মূলত সবকিছু খুলে দেওয়া হলো। শর্তগুলো হলো- ১. সব সরকারি/আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা থাকবে। ২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ৩. সড়ক, রেল ও নৌপথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন/যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সড়কপথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দফতর/সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে। ৪. শপিং মল/মার্কেট/দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা রাখা যাবে। ৫. সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা চালু থাকবে। ৬. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। ৭. সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এবং ৮. গণপরিবহন, বিভিন্ন দফতর, মার্কেট ও বাজারসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আদেশ জারির আগে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরামর্শ ধাপে ধাপে শিথিল করা। কোনটি কখন খোলা হবে, কতটুকু পরিসরে খোলা হবে- তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। কেননা, সংক্রমণ কমলেও মৃত্যু এখনো কমেনি। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল রাখতে ও নিম্নআয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কঠোরভাবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন হয় সেদিকে নজর থাকবে।’ গণটিকা কার্যক্রমে প্রতি ইউনিয়নে ৬০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা সবজি ব্যবসায়ী, রিকশাচালক; যাদের বাইরে আসতে হয়, বিভিন্ন কারণে যেসব মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয় তাদের বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে বয়স্ক ও মুক্তিযোদ্ধাও আছেন। আমাদের জীবিকাও নিশ্চিত করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা নিতে পারেন। প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হলেও ঈদের সময় আট দিন বিরতি দিয়ে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তা শেষ হয় ৫ আগস্ট। এর মধ্যে বিধিনিষেধ ১০ আগস্ট পর্যন্ত আরেক দফা বাড়ানো হয়। বিধিনিষেধের মধ্যেই গত ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পকলকারখানা খুলে দেওয়া হয়।

বিভিন্ন স্থানে লকডাউনের খবর জানিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-

মাদারীপুর : অন্যান্য দিনের মতো গতকালও সকাল থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে চলাচলরত প্রতিটি ফেরিতে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল। এই নৌপথে স্রোতের কারণে ফেরি কম চলায় যাত্রীদের ফেরি পার হওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। ফলে যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের দুর্ভোগ বাড়ে। কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : সরকারের দেওয়া লকডাউন অমান্য করে দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল করায় গতকাল সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে ২১টি বাস আটক করে হাইওয়ে পুলিশ। হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, বেশি ভাড়ার আশায় রাতের আঁধারে কিছু অসাধু চালক মহাসড়কে যানবাহন চালালে সেসব দূরপাল্লার বাস আটক করে হাইওয়ে পুলিশ। কুমিল্লা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে যান চলাচল। মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা, মাধাইয়া, নিমসার ও ময়নামতি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হরদমে চলছে সব ধরনের যাত্রীপরিবহন। হাইওয়ে পুলিশ ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) জিয়াউল হক চৌধুরী জানান, মহাসড়কের যান চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ রোগী, বিদেশগামী, টিকা গ্রহণসহ বিভিন্ন অজুহাতে বের হচ্ছেন। দ্রুতগামী গাড়িগুলো চেকপোস্টের সিগনালও মানতে রাজি না। তারপরও আমরা যেটুকু পারছি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর