বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

নোয়াখালীর মামলা সিআইডিতে কুমিল্লায় আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ

রংপুরের ক্ষতিগ্রস্তরা পেলেন টিনের ঘর

প্রতিদিন ডেস্ক

কুমিল্লা, রংপুর ও নোয়াখালীতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে নোয়াখালীর তিন মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে সিআইডিতে। পাশাপাশি রংপুরের পীরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত ৬৬ পরিবারকে ওঠানো হয়েছে নতুন টিনের ঘরে। এখানে চার মামলায় এ পর্যন্ত ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিবরণ-

কুমিল্লা : কুমিল্লার ঘটনায় মসজিদ-মন্ডপের দায়িত্বশীল কেউ সম্পৃক্ত আছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল বিকালে সিআইডি কুমিল্লার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান জানান, প্রথমে ইকবাল-ইকরামকে গুরুত্ব দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এ ঘটনায় রিমান্ডে থাকা চারজনকেই ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকি দুজন হুমায়ুন কবির ও ফয়সাল। এ ঘটনায় মসজিদ-মন্ডপের কেউ যুক্ত আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের শনাক্তে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে ইকবাল-ইকরামদের রিমান্ডের পঞ্চম দিন ছিল গতকাল। এ পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২৩ অক্টোবর পুলিশ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। বিচারক মিথিলা জাহান নিপা ইকবাল হোসেনসহ চারজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ জানায়, সিসিটিভি ফুটেজের প্রথম অংশে মসজিদে ফয়সাল ও হুমায়ুনের সঙ্গে ইকবালকে দেখা যায়। ফুটেজের শেষাংশে দেখা যায় ৯৯৯-এ কল করা ইকরামকে। ইকবাল ছাড়া বাকি তিনজনের কেউ এখনো মন্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেননি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর জানান, প্রাথমিকভাবে ইকবাল ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। অন্যদেরও সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ রয়েছে। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখছি। ওরা আরও কোনো ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে সেখানেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। যেহেতু এটা স্পর্শকাতর বিষয়, তাই তদন্তে সময় লাগবে। রংপুর : রংপুরের পীরগঞ্জে সনাতন ধর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কোনো কেন্দ্রীয় নেতার পা পড়েনি ক্ষতিগ্রস্ত মাঝিপাড়ায়। এ দুই দলের কেন্দ্রীয় কোনো নেতাই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি। এ নিয়ে অনেকের মাঝে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে ওই ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৭০ জনকে। এ ছাড়া ওই দিনের সহিংসতার শিকার ৬৬টি পরিবারই নিজ বাড়িতে নতুন টিনের ঘরে উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নতুন টিন দিয়ে ঘর ও বেড়া নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সহিংসতায় মোট ৬৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  ক্ষতিগ্রস্তদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। একটি হলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আরেকটি হলো কম ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে ২৬টি পরিবারের ঘর আগুনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ৪০টি পরিবারের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরের ছাউনি ও বেড়া নতুন টিন দিয়ে তৈরি ও মেরামত করা হয়েছে। ফলে চকচক করছে পুরো গ্রামটি। ২৬টি পরিবার ২ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি  নগদ টাকা এবং কাপড়, শুকনো খাবার পেয়েছেন। এ ছাড়া যাদের কম ক্ষতি হয়েছে তারাও ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা পেয়েছেন। মাঝিপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত নিখিল চন্দ্র বলেন, ‘আগুনে আমার ঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গিয়েছিল। এক দিন পরই সরকারিভাবে আমার বাড়ি ঠিক করার জন্য মিস্ত্রি লাগাই। এখন আমি নতুন ঘরে ব্যবসা করছি।  ক্ষতিগ্রস্ত দেবেন চন্দ্র বলেন, স্পিকার স্যার টিন আর নগদ টাকা দিয়েছেন। টিন দিয়া ঘরগুলো একদম নতুন করে বানায়ে দিছেন। আমরা খুব খুশি।’ উল্লেখ্য, গত ১৭ অক্টোবর একদল দুর্বৃত্ত পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়ায় হামলা চালায়। এতে ৬৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হন। ঘটনার পরপরই এলাকায় ছুটে আসেন পীরগঞ্জ আসনের এমপি, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহামুদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক, ভারতের সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জিব ভাট্টি, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাম দলের একাধিক নেতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিন্তু জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কোনো কেন্দ্রীয় নেতা এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাননি। এদিকে সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত নতুন করে একজন গ্রেফতার হয়েছে। প্রথম দফায় ৩৭ জনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেলহাজাতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে আরও ১৩ জন রিমান্ডে রয়েছেন। আজ তাদের রিমান্ড শেষ হবে। এ ছাড়া গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থেকে গ্রেফতার শিবির কর্মী আবদুল্লাহ আল মামুন ও ওমর ফারুক ওরফে টনেটকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। সেই রিমান্ড আবেদনের শুনানি আজ হওয়ার কথা রয়েছে। এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেস চন্দ্র। নোয়াখালী : নোয়াখালীতে সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর ও হত্যাসহ তিনটি মামলা তদন্তের জন্য সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের মামলার ৮ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল দুপুরে জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সোনিয়া আক্তারের আদালতে পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বিচারক। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম প্রকাশ, জি এস সুমনসহ আরও ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২৯টি মামলায় এ নিয়ে জেলায় মোট ২০৭ জনকে গ্রেফতার করা হলো।

মন্দিরের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম জানান, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সর্বস্তরের লোকজন নিয়ে নিরাপত্তার বলয়ের জন্য মন্দিরের ও মসজিদের সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হবে। প্রত্যেকটি মন্দিরে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করেছি এবং উসকানিদাতারাও চিহ্নিত হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর