সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের রায়

বাবার কাছেই থাকবে জাপানি মায়ের দুই শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাপানি মায়ের দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাংলাদেশে তার বাবা প্রকৌশলী ইমরান শরীফের কাছেই থাকবে বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে জাপান থেকে এসে মা ডা. নাকানো এরিকো বছরে তিনবার ১০ দিন করে দুই সন্তানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। জাপানি মায়ের আসা-যাওয়া ও থাকা-খাওয়ার সব খরচ বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফকে বহন করতে হবে। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে।

এদিকে, জাপানে থাকা ছোট মেয়ে হেনাকে হাই কোর্টে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল আইনজীবী  ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ,  মো. মোশতাক আহমেদ, ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন। জাপানি মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রায় ঘোষণার আগে হাই কোর্ট বলে, হৃদয়বিদারক কথা আমরা আজকে যে রায় বা আদেশ দিই না কেন সব চেয়ে বেশি ভিকটিম কোনো না কোনো পক্ষ হবে। তার চেয়ে বেশি ভিকটিম হবে এ দুই সন্তান। আমরা আশা করব বাবা-মা দুই পক্ষই ভবিষ্যতে যেন আরও গঠনমূলক এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ কথা বিবেচনা করেন, আমরা সে সুযোগ রেখে আদেশ দিচ্ছি। সর্বমোট আমরা শিশুদের সঙ্গে তিনবার কথা বলেছি। বিবেচনায় মনে করেছি, বাচ্চাদের বর্তমান পর্যায়ে তাদের কল্যাণের বিষয়টি মাথায় রেখেই আদেশ দেওয়া সমীচীন। এরপর আদালত ৯টি নির্দেশনা দেয়। রায়ে আদালত বলে, রিটটি চলমান থাকবে। দুই মেয়ে বাবা ইমরান শরীফের হেফাজতে থাকবে। মা দেখা-সাক্ষাৎ এবং একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। যেহেতু মা জাপানি নাগরিক, সেখানে থাকেন এবং কাজ করেন, তাই তিনি নিজের সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশে এসে সন্তানদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন করে সময় কাটাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বছরে তিনবার বাংলাদেশে যাওয়া-আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ বাবা ইমরান শরীফকে বহন করতে হবে। এর বাইরে আসা-যাওয়ার খরচ মা বহন করবেন। ছুটির দিনে অন্তত দুইবার বাবা সন্তানদের মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন। এ ছাড়া আদালত নির্দেশনা দেয়, গত কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত খরচ বাবদ শিশুদের মা নাকানো এরিকোকে ১০ লাখ টাকা দেবেন বাবা ইমরান শরীফ। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাকে এ অর্থ দিতে হবে। রিটটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ প্রতিপালিত না হলে বা অন্য কোনো আদেশের জন্য আদালতে উভয়পক্ষ আসতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখবেন। প্রতি তিন মাস অন্তর শিশুদের বিষয়ে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে। গত ৩১ অক্টোবর উভয়পক্ষের ভার্চুয়াল শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য ১৪ নভেম্বর দিন ঠিক করেছিল। কিন্তু ১৪ নভেম্বরের কার্য তালিকায় রায়ের জন্য পিছিয়ে ২১ নভেম্বর রাখা হয়। এর আগে স্বামী ইমরান শরীফের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই কন্যাসন্তানকে ফিরে পেতে গত ১৯ আগস্ট হাই কোর্টে রিট করেন জাপানি নারী নাকানো এরিকো। ওই দিন রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট দুই শিশুকে হাজির করতে নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশের পর ২২ আগস্ট দুই শিশুকে বাবা ইমরানের বারিধারার বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে আদালতের নির্দেশেই তাদের উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। পরে দুই পক্ষের আইনজীবী শিশু দুটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে ভিন্ন কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে আদালতের কাছে আবেদন করেন। আদালত তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গুলশানের একটি বাসায় বাবা-মাকে সময় ভাগ করে যৌথভাবে থাকার নির্দেশ দেয়।

সর্বশেষ খবর