সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

আন্দোলন অব্যাহতের ঘোষণা

নিরাপদ সড়ক ও হাফ ভাড়ার দাবিতে বিক্ষোভ, গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা, যানজটে ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্দোলন অব্যাহতের ঘোষণা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল ধানমন্ডিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা -জয়ীতা রায়

সড়ক নিরাপদ করতে ৯ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আগের ঘোষণা অনুযায়ী নিরাপদ সড়ক ও নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি, কাকরাইল, শান্তিনগর ও নীলক্ষেতে সড়ক অবরোধ করে। এ সময় পুলিশ ও বিচারকের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাস ও প্রাইভেট কারে কাগজপত্র না পেয়ে সার্জেন্ট ডেকে মামলা করাতে বাধ্য করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন ও বাড়তি চেকিংয়ের কারণে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সপ্তাহের প্রথম  কর্মদিবসে জরুরি প্রয়োজনে বের হয়ে ব্যাপক যানজটের ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। বিক্ষোভ শেষে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে গতকালের মতো রাস্তা ছাড়ে শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের মিরপুর সড়ক অবরোধ করে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী। প্রথমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকলেও পরে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজসহ আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেয়। এ সময় তাদের ‘হাফ পাস না নিলে, দেখি গাড়ি কেমনে চলে’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ সড়ক চাই’- স্লোগান দিতে দেখা গেছে। শত শত শিক্ষার্থীর জোরালো কণ্ঠে মুখরিত হয়ে ওঠে ওই এলাকা। এ সময় ধানমন্ডি ও আসাদগেট এলাকার বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে লাখো মানুষকে। বিক্ষোভ চলাকালীন সড়কে চলাচলরত যানবাহন আটকিয়ে কাগজপত্র যাচাই করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা সাভার চন্দ্রা থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলরত ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসের চালকের লাইসেন্স দেখতে চায়। এ সময় চালকের আসনে থাকা ব্যক্তি জানান, তিনি আসল চালক নন। গাড়ির মূল চালক বাসায় গেছেন। পরে চালকের আসনে থাকা বাসের ওই সহকারী মূল চালককে ফোন দেওয়ার কথা বলে কৌশলে সটকে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সহায়তায় বাসের কন্ডাক্টরকে আটক করে পুলিশ। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি আটকায় শিক্ষার্থীরা। প্রথমে চালক কাগজপত্র না দেখালে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে শুরু করে। একপর্যায়ে চালক কাগজপত্র দেখালে গাড়িটি ছেড়ে দেয়। এ সময় হাজী সেলিম গাড়িতেই ছিলেন। তবে, কোনো কাগজ না থাকায় সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারকের গাড়ি আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা। গাড়িতে থাকা চালক মো. মুকুল উকিল দাবি করেন তিনি ভুলে গাড়ির কাগজ নিয়ে বের হতে ভুলে গেছেন। ডিএমপির তেজগাঁও জোনের এডিসি রুবাইয়াত জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা শন্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে নেমেছে। কয়েক দিনের মতোই তাদেরকে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি। আন্দোলনে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। একপর্যায়ে তারা জনদুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে আন্দোলন সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এদিকে দুপুর ১টার দিকে শান্তিনগর মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারাও ৯ দফা দাবিতে শান্তিনগর থেকে কাকরাইল পর্যন্ত সড়কে মিছিল করে। এ সময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরে শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। দুপুর সোয়া ২টার দিকে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শাখা প্রধান (কলেজ) মশিউর রহমান শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন। এরপর কাকরাইল এলাকার সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। এর আগে, বেলা ১১টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সিটি কলেজের সামনের সড়কে গিয়ে অবস্থান নেন। উল্লেখ্য, ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এরপর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত বুধবার সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। বৃহস্পতিবার পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে ঢাকাসিটি মূলত অচল হয়ে পড়ে। শুক্রবার বিরতি দিয়ে শনিবারও সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগে, ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনে যে ৯ দফা দাবি ছিল, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, এবার দাবি আদায় না হলে আগামী মঙ্গলবার তারা নতুন কর্মসূচি দেবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর