রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নরসিংদী, কক্সবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস আজ

নরসিংদী, কক্সবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

নরসিংদী, কক্সবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস আজ

আজ ১২ ডিসেম্বর। নরসিংদী, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বগুড়ার আদমদীঘি পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল শত্রুমুক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বিভিন্ন জেলার আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বিজয়ের আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়েন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ।

নরসিংদী : সম্মিলিত মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে ১৯৭১-এর এদিন সমগ্র নরসিংদী অঞ্চল পাক হানাদারমুক্ত হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শতাধিক খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে নরসিংদীতে ২৭, পলাশে ১১, শিবপুরে ১৩, রায়পুরায় ৩৭, বেলাবতে ১৬, মনোহরদীতে ১২- মোট ১১৬ বীর সন্তান শহীদ হন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর মুক্তিযুদ্ধের সূচনাতেই ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। শুরু হয় দুর্বার আন্দোলন। নরসিংদী জেলা হানাদারমুক্ত দিবসে আজ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।

কক্সবাজার : ১৯৭১ সালের এদিন কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার অধিনায়ক ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুস সোবহানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রস্থল পাবলিক হল ময়দানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এ অঞ্চল শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উখিয়ার মরিচ্যায় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা সম্মেলন ও আলোচনা সভা।

আদমদীঘি (বগুড়া) : দীর্ঘ নয় মাস গেরিলা যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এদিন বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আদমদীঘি উপজেলা সদরকে পাকিস্তান হানাদারমুক্ত করেন। ১১ ডিসেম্বর রাতের শুরু থেকে হানাদার বাহিনীর ওপর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালাতে থাকেন। এতে পাক হানাদাররা দিশাহারা হয়ে ১২ ডিসেম্বর ভোর থেকেই সদর থেকে রেললাইনের পাশ দিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুমুক্ত করে বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে আদমদীঘি সদরকে হানাদারমুক্ত করেন।

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) : ১৯৭১ সালের এদিন লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে সামগ্রিক বিজয় ছিনিয়ে আনার তিন দিন আগেই গোবিন্দগঞ্জে ওড়ে বিজয়ের পতাকা। পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ। আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে সকল শ্রেণির মানুষ।

চান্দিনা বুড়িচং (কুমিল্লা) : ১৯৭১ সালের এদিন বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করেন চান্দিনা। ১১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মানসিকভাবে দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে আক্রমণ করলে হানাদার বাহিনী মেঘনা নদী দিয়ে গজারিয়া হয়ে পালিয়ে যায়। চান্দিনায় মুক্তিযোদ্ধারা উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।

হিলি (দিনাজপুর) : ১৯৭১ সালের এদিন হিলি শত্রুমুক্ত দিবস। দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে পাক বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক যুদ্ধ হয় মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর। এতে এ দুই বাহিনীর ৩ শতাধিক সদস্য শাহাদাতবরণ করেন। পাক বাহিনীর শতাধিক সদস্য মারা যায়। ১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও বেঙ্গল রেজিমেন্ট সারারাত প্রস্তুতি নিয়ে ভোরে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র রেস্ট হাউসে অবস্থান করে। ব্যাপক যুদ্ধের পর পাক বাহিনী রাতে আশুগঞ্জ থেকে পাশের ভৈরব পালিয়ে যায়। তাদের পালানোর সময় মেঘনা নদীর রেলসেতুর একাংশ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেন মুক্তিসেনারা। এতে সেতুর দুটি স্প্যান ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। পরে বিনা বাধায় আশুগঞ্জ বাজার এলাকা দখল করেন মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা। শত্রুমুক্ত হয় আশুগঞ্জ। দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আশুগঞ্জ উপজেলা কাউন্সিলের উদ্যোগে আশুগঞ্জ স্মৃতিস্তম্ভে পতাকা উত্তোলন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর