শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে অবশেষে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি বলেছেন, আগামী ১৬ জানুয়ারি নৌকাকে জয়ী করতে হবে। ওই দিন খেলা হবে। আর সবাই খেলা দেখবে। কে নৌকার প্রার্থী কলা গাছ, না তাল গাছ। হু কেয়ারস। তা না দেখে স্বাধীনতার প্রতীক নৌকাকে জয়ী করতে হবে। আর যারা নৌকা ডুববে বলে নারায়ণগঞ্জে নানা রসিকতা করছেন তাদের পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, নৌকা ডুববে না। হাতি কান্দে কইরা নৌকা নিয়ে পার করে দেব ইনশাল্লাহ। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের বাঁধন কমিউনিটি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জীবনের সবচেয়ে কষ্টের প্রেস কনফারেন্স উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা হিমালয় সমান কষ্ট নিয়ে পরিবারের হত্যার বিচারের জন্য যুগের পর যুগ অপেক্ষা করেছেন। শেখ হাসিনা বলে থাকেন তিনি নীলকণ্ঠী। বিষ খেয়ে তিনি হজম করতে পারেন। মনে রাখবেন একজন সোলজার কিন্তু তার জেনারেলকে অনুসরণ করে। আর আমরা শেখ হাসিনার সোলজার, আমরা আমৃত্যু শেখ হাসিনার অনুসরণ করব। আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা বলব না। বাবা যখন মারা যান তখন আমাদের তিন ভাইকে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সঙ্গে বলে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যদি জীবন দেওয়া লাগে তাও দেবে। আমার বড় ভাই নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে নববধূকে ছেড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। তাই যারা নানা কথা বানাতে চান, তাদের বলছি নৌকার সঙ্গে আছি, ছিলাম ও শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকব। নারায়ণঞ্জ শেখ হাসিনার নৌকার ঘাঁটি, নৌকার রাজধানী, নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির। আমার বুকে গুলি, বোমা, বুলেট ছুড়ে মারলে শেখ হাসিনার বা নৌকার বাইরে কেউ নিতে পারবে না। তিনি বলেন, আমি নির্বাচনে কোনো সাবজেক্ট না। বাট আমাকে নিয়ে গণমাধ্যমে টুইস্ট হচ্ছে বেশ। আমি কিন্তু চুপই ছিলাম। আমিও তো রক্তে মাংস দিয়ে গড়া মানুষ। কিছু সংখ্যক হাইব্রিড ও তেলবাজদের জন্য এখন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এবার নির্বাচনে খুব খুশি মনে ঝাঁপিয়ে পড়ব বলে মনে করেছিলাম। আমি কাউকে ব্লেম করিনি শ্মশানের মাটির ব্যাপারে। আমি বলেছিলাম এটা ইবলিশ শয়তানের কাজ। এটা কোনো মানুষ করতে পারে না। আপনার আমার বাবা-মা পূর্বপুরুষদের কবরে কেউ যদি শ্মশানের মাটি দেয়। ধরেন আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা না, মা ভাষাসৈনিক না, ভাইও মুক্তিযোদ্ধা না, সাধারণ মানুষ-ই। আমার জীবনে আমি এত কাঁদি নাই। যেদিন শ্মশানের মাটি ফেলা হলো পূর্বপুরুষদের কবরে। আমি জাস্ট একটা তদন্ত চেয়েছিলাম। তদন্ত করলেই তো হতো। কাউকে ব্লেম করি নাই। উল্টো একটা প্রেস রিলিজ এসেছিল যা আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। আসলে প্রেস রিলিজটা অন্যরা করিয়ে দিয়েছিল। আমি শীর্ষ নেতাদের বলেছিলাম তাকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। আর আমাকে গডফাদার যে বলেছেন, তার উচিত এখন র্নির্বাচনকালীন এসব কথা না বলা। এতে তারই ক্ষতি। নির্বাচন করলে মাঝে-মধ্যে মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে যায়। তবে একটা অনুরোধ গডফাদার, ব্রাদার যা-ই বলুক, কখনো মাদার বইলেন না। তবে পদ-পদবির বাইরে, নৌকার বাইরে যাওয়া কোনো প্রশ্নই আসে না। আমরা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা, দল আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও নৌকা প্রতীক প্রশ্নে আপসহীন। শামীম ওসমান বলেন, আমি তো এমপি, আমি তো নামতে পারি না। বাট অনেকে নেমেছে। আমরাই আইন করি। আর আমরাই যদি ভঙ্গ করি তাহলে কীভাবে। আর আমি নামি নাই এ কথা কে বলল। ঢাকা থেকে আগত কেন্দ্রীয় মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এদের সঙ্গে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কে বা কারা আপ্যায়ন করছে। কারা ওয়ার্ক করছে। হ্যাঁ বলতে পারেন আমার যেভাবে নামা দরকার সেইভাবে নামিনি। কারণ বুকের মধ্যে অনেক কষ্ট চাপা দিয়ে আজকের এই প্রেস কনফারেন্স। এখানে যাদের দেখছেন নেতা-কর্মী মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ সবাই মাঠে কাজ করছে। আপনারা মাঠে গিয়ে দেখেন। শুধু একটা কথা প্রার্থীর কাছে বলব, তাদের (নেতা-কর্মীদের) কষ্ট দিয়েন না। এমনিতেই এখানে অনেকেই মামলার আসামি। তাদের মনে আর কষ্ট দিয়েন না। নির্বাচন ভালোবাসা দিয়ে অর্জন করতে হয়, ধমক দিয়ে নয়। একটা কথা পরিষ্কার বলে দেই, আমার বুকের মধ্যে গুলি, বুলেট আর বোমা যাই ছুড়ে মারেন শেখ হাসিনার আদর্শের বাইরে মৃত্যু হলেও যাই নাই যাবও না। আপনি কি চাপে পড়ে নৌকার পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, আমার প্রিয় একটা কথা আছে, ভাগ্য যোদ্ধাকে বলছে, তুমি ঝড়ের সামনে দাঁড়াতে পারবে না। আর যোদ্ধা বলে আমিই ঝড়। এই ঝড়দের চাপ দেওয়া সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমি অবাক হই, আমি কেন সবসময় সাবজেক্ট হই। আমি হচ্ছি গরিবের বউ। আর গরিবের বউ সবার ভাবি হয়। তাই যত কথা আছে বা যা কিছু বলার আছে নৌকাকে ১৬ জানুয়ারি জয়ী করে পরে কথা বলব।