মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ভর্তুকি প্রণোদনা ঋণ পরিশোধে ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা

আসছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যাপকভাবে ব্যয় বাড়তে যাচ্ছে সরকারের। এর প্রভাব পড়ছে আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরিতে। আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে নতুন অর্থবছরের জন্য যে বাজেটে চূড়ান্ত করা হয়েছে তাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার সরকারি ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণের সুদ পরিশোধে। এটি আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত অনুন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক এবং মোট উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে বেশি। আসছে অর্থবছরের জন্য অনুন্নয়ন ব্যয় চূড়ান্ত করা হয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৫৭ কোটি এবং মোট উন্নয়ন ব্যয় (এডিপি) প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।

১৭ মার্চ আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের ভার্চুয়াল বৈঠকে আগামী অর্থবছরের প্রাথমিক বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও সার বাবদ সরকারের যে ব্যয় বাড়ছে তা নতুন বাজেটে কী ধরনের চাপ তৈরি করবে সেসব তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৌশল নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ সময় সিদ্ধান্ত হয় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে জ্বালানি ও সারে ভর্তুকি বাড়ানোর। বৈঠকে জানানো হয়- ভর্তুকি সমন্বয় না করা হলে আগামী অর্থবছরে খাদ্য বাবদ ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি, বিদ্যুতে ১৮ হাজার কোটি, গ্যাসে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি ও সারে ১৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হবে। শেষে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধ ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয় জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রায়। গত অর্থবছরে এ খাতে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে জিডিপির ১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ বছর জ্বালানি তেল ও সারে ভর্তুকি বেড়েছে। নতুন বাজেটে এর চাপ কিছুটা বাড়লেও কোনোভাবেই এ ভর্তুকি প্রত্যাহার করা যাবে না। কারণ কৃষি খাতে সার বাবদ ভর্তুকি কমালে খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব পড়বে। আবার জ্বালানি ভর্তুকি কমালে শিল্পোৎপাদনসহ সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়বে, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সে কারণে সরকারের উচিত হবে রাজস্ব আয় বাড়িয়ে অতিরিক্ত ব্যয়ের চাপ সামাল দেওয়া।’ এ ছাড়া সরকারি সংস্থার অপচয় ও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়েও কিছু অর্থ সমন্বয় করা যেতে পারে বলে মনে করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক এই সিনিয়র সচিব।

কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে উপস্থাপিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী বাজেটে মোট রাজস্ব আয় চূড়ান্ত করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ১১ শতাংশ বেশি। চলতি বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। মোট রাজস্বের মধ্যে এনবিআর কর ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এনবিআর কর আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। বৈঠকের তথ্যানুযায়ী আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার চূড়ান্ত করা হয়েছে ৭ দমমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। আর সরকারি-বেসরকারি খাতে মোট বিনিয়োগ অনুমান করা হয়েছে জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ২৪ দশমিক ৯ ও সরকারি খাতে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বিনিয়োগ আশা করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, করোনা-পরবর্তী সময়ে দোকানপাট, শিল্পকারখানা আবার পুরোদমে চালু হওয়ায় অর্থনীতি গতি ফিরে পাচ্ছে বলে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে উঠে আসে। নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণের কৌশল অব্যাহত রাখার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়। এ ছাড়া কভিড-১৯-পরবর্তী অর্থনীতি চাঙা রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজের বাকি অর্থপ্রবাহও অব্যাহত রাখা এবং কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়েও সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করেন।

সর্বশেষ খবর