শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

আল্লাহ ও ইবাদতে অটল-অবিচল থাকার পুরস্কার

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

আল্লাহ ও ইবাদতে অটল-অবিচল থাকার পুরস্কার

গত রাত ছিল ২৭তম রাত। আল্লাহর তওফিকে সাধ্য অনুযায়ী আমরা ইবাদত-বন্দেগি করেছি। ইবাদত-বন্দেগির এ ধারা মৃত্যু পর্যন্ত ধরে রাখার মধ্যেই কামিয়াবি। কারণ একজন মুসলমানের জন্য সর্বোত্তম সম্পদ ইমান ও নেক আমল। হজরত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বলতেন ‘তাআল্লামনাল ইমান ছুম্মা তাআল্লামনাল কোরআন’। অমরা আগে ইমান শিখেছি, এরপর কোরআন শিখেছি। ইমান ও আমল মুসলমানদের জন্য অনেক বড় মূল্যবান সম্পদ। সুরাতুল আসরে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘সময়ের কসম! নিশ্চয়ই সব মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। শুধু তারা ব্যতীত; যারা ইমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে’। (সুরা আসর : আয়াত ১-২)। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, যে কোনো আমল শুরু করা সহজ; কিন্তু এর ওপর অটল-অবিচল থাকা কঠিন। তবে প্রকৃত ইমানদারের কাছে ইবাদতের ওপর অটল-অবিচল থাকা অতি সহজ বিষয়। যেমন আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ধৈর্যের সঙ্গে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাজের মাধ্যমে, অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন কিন্তু সেসব বিনয়ী লোকের পক্ষে তা সম্ভব। (সুরাতুল বাকারা : ৪৫)।

যারা ইবাদতকারী তারাই বিনয়ী। তারা সবকিছু এক আল্লাহর ওপর অর্পণ করে, আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকে। সব সময় ইবাদতে অটল-অবিচল থাকাকে নিজেদের ওপর অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব মনে করে। এসব লোকের জন্য আল্লাহতায়ালা আয়াত নাজিল করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের রব আল্লাহ অতঃপর তাতে অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়, এবং বলে তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না, এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন’। (সুরা হা-মীম-ছাজদা : ৩০)। বস্তুত জান্নাতের শুভ সংবাদ ও দুনিয়ার জীবনে পুরস্কার তাদের জন্যই যারা আল্লাহতায়ালার ইবাদতে অটল-অবিচল থাকে। এবং ইমান নিয়ে পরকালে গমন করে। আর দুনিয়ার জীবনে প্রকৃত পক্ষে তারাই ইবাদতে অটল-অবিচল থাকতে পারে। যারা প্রিয়নবী (সা.) এর তরিকা অনুযায়ী ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশ করে, যার প্রমাণ রয়েছে সাহাবায়ে কেরামদের জীবনে। এখানে বিস্তারিত লেখার সুযোগ নেই। তবে এমন একজন সাহাবিয়ার (রা.) কথা লিখব যিনি দীনের ওপর অটল-অবিচল থাকার  পুরস্কার হাতে হাতে পেয়েছেন। নাম তাঁর উম্মে শারিক গায্যিয়া বিনতে জারির (রা.)। তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। স্বামীর পরিবারের লোকজন তার ইসলাম গ্রহণের সংবাদ শুনে তাকে কঠোর শাস্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। হজরত উম্মে শারিক গায্যিয়া তার ওপর নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে নিজেই বলেন, তারা আমাকে সর্বাধিক নিকৃষ্ট একটি উটের ওপর বসায়। খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয় মধু ও রুটি। আমাকে পানি পান করা থেকে বিরত রাখে। এ অবস্থায় মরুভূমিতে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত আমাদের কাফেলা চলতে থাকে। সূর্যের তাপ প্রখর হলে তারা (স্বামীর পরিবারের লোকজন) তাঁবু স্থাপন করে। তারা তাঁবুতে বিশ্রাম নিয়ে আমাকে প্রচণ্ড প্রখর রোদে ফেলে রাখে। প্রখর রোদের প্রচণ্ড তাপে আমার জ্ঞান, শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। একাধারে তিন দিন পর্যন্ত চলতে থাকে এ নির্যাতন। পরে তারা আমাকে ইমান ত্যাগ করার প্রস্তাব করে। তাদের কথাবার্তার শব্দ ছাড়া কিছুই বুঝতে না পেরে আমি আঙুল আসমানের দিকে তুলে আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রধান করলাম। আল্লাহর শপথ! এ অবস্থাতেই আমি প্রচণ্ড তাপে মরুভূমিতে পড়ে ছিলাম। আমার কষ্ট-ক্লেশ ধৈর্যের চরম সীমায় পৌঁছে যায়। আলহামদুলিল্লাহ, কিছুক্ষণের মধ্যেই আল্লাহর সাহায্য পেয়ে গেলাম। হঠাৎ আমি আমার বুকে ঠাণ্ডা বালতির শীতলতা অনুভব করলাম। সেই বালতি থেকে এক শ্বাস পানি পান করলাম। পরে বালতি আমার কাছ থেকে উপরে ওঠে গেল। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম, বালতিটি আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলতে থাকে। পরে বালতিটি দ্বিতীয়বার আমার কাছে নেমে আসে। আমি তা থেকে আবার এক শ্বাস পানি পান করলাম। কিছুক্ষণ পর বালতিটি আমার কাছ থেকে পুনরায় উপরে ওঠে আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলছে। বালতিটি তৃতীয়বার আমার কাছে নেমে আসে। আমি তা থেকে পরিতৃপ্তি সহকারে পানি পান করলাম অতঃপর পানি মাথায়, চেহারায় ও কাপড়ের ওপর নিলাম। সুবহানআল্লাহ। আমার স্বামীর পরিবারের লোকজন তাঁবু থেকে বের হয়ে এসে এ দৃশ্য দেখে আমাকে বলল, হে আল্লাহর দুশমন! এ (পানি) তুমি কোথা থেকে পেলে? আমি তাদের বললাম, আল্লাহর দুশমন আমি নই; বরং আল্লাহর দুশমন তো তোমরা। আর এ পানি কোথা থেকে পেলাম জানতে চাও? এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত নেয়ামত। তারা আমার কথা শুনে দ্রুত তাদের তাঁবুতে রক্ষিত মশকের কাছে গিয়ে দেখে তা বন্ধ, খোলা হয়নি। তখন তারা বলে ওঠল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, যে সত্তা তোমার প্রতিপালক, সে সত্তা আমাদেরও প্রতিপালক। সুবহানআল্লাহ। তোমার সঙ্গে আমাদের এ নিষ্ঠুর আচরণ করার পরও যে মহান সত্তা তোমাকে নেয়ামত দান করেছেন, তিনিই হলেন এক আল্লাহ। তারা তখন সবাই কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল। সুবহানআল্লাহ। পরে তারা প্রিয়নবী (সা.) এর কাছে হিজরত করে চলে আসেন। এ হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত শারিক গায্যিয়া (রা.) দীন ও ইমানের ওপর অটল-অবিচল থাকার মহা পুরস্কার। আমাদের উচিত সর্বাবস্থায় দীন ও ইমানের ওপর অটল ও অবিচল থাকা। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে চূড়ান্ত সফলতা লাভ করা। ইমানের ওপর অটল-অবিচল থাকার জন্য কয়েকটি করণীয় আমল ১. সব সময় কোরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা, ২. বেশি বেশি নেক আমল করা, ৩. সত্যবাদীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা, ৪. সব সময় আল্লাহর জিকির করা, ৫. বেশি বেশি দোয়া করা। আল্লাহতায়ালা তামাম উম্মতে মুসলিমাকে সর্বাবস্থায় ইমান ও আমলের ওপর অটল-অবিচল থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।

 

সর্বশেষ খবর