শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

রমজানের শিক্ষা ও ইমান বৃদ্ধির জন্য করণীয়

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রমজানের শিক্ষা ও ইমান বৃদ্ধির জন্য করণীয়

মাহে রমজান বিদায় নিচ্ছে, বিদায় নেবে এমনটিই স্বাভাবিক। আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে আপন প্রভুর কুদরতি হাত থেকে সরাসরি পুরস্কার নেওয়ার মাস প্রায় শেষের পথে। আর মাত্র এক-দুই দিন বাকি। তাই এ সময়কে গনিমত মনে করে সাধ্যমতো ইবাদত-বন্দেগিতে পার করি। কারণ একদিন আমরাও এ সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যাব। এ পৃথিবীতে থাকতে পারব না, থাকা যাবে না। যেতে হবে পরলোকে। চিন্তার বিষয হলো কী নিয়ে যাব। আমরা অনেক মুরব্বিকে বলতে শুনেছি, যদি জিজ্ঞেস করি মুরব্বি কেমন আছেন? উত্তরে বলতেন, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ ভালো রেখেছেন। পরেই বলতেন, বাবারে! দোয়া কোরো যেন ইমান নিয়ে কবরে যেতে পারি। নেক আমল তো কিছুই নেই। চিন্তা করছি কী নিয়ে পরকালে যাব? সত্যিই, কী নিয়ে কবরে যাব এ চিন্তা শুধু মুরব্বিদের নয়, সব ইমানদার মুসলমানেরও। কী নিয়ে কবরে যাব? কবরে শান্তি ও আরামে থাকার জন্য প্রয়োজন জীবিত থাকতে ইমান ও আমল বাড়ানো। তার ওপর অটল থাকা। মাহে রমজানে যেভাবে ইমান বৃদ্ধির আমল করেছি, রমজানের পরও সে আমল ধরে রাখা। আজ আমরা জেনে নেব কী আমল করলে ইমান বাড়ে। বুজুর্গানে দীনেরা কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইমান বাড়ানোর অনেক উপায় উল্লেখ করেছেন। কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

১. দীনি ইলম শিক্ষা করার প্রতি যত্নবান হওয়া এবং মহব্বতের সঙ্গে দীনি ইলম শিক্ষা করা। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই তো আল্লাহকে বেশি ভয় করে থাকে।’ (সুরা ফাতির, আয়াত ২৮) ২. আল্লাহর কুদরত নিয়ে গবেষণা করা। আল্লাহর কুদরত বা শক্তি নিয়ে গবেষণা করার দ্বারা আল্লাহর ওপর ইয়াকিন মজবুত হয় এবং তাঁর ওপর ইমান বৃদ্ধি পায়। ৩. কোরআনের অধিক তিলাওয়াত করা। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা ইমানদার তারা এমন যে যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম তখন তাদের ইমান বেড়ে যায়। এবং তারা স্বীয় পরোয়ারদেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে।’ (সুরা আনফাল আয়াত ২)

৪. আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো স্মরণ করে করে তাঁর কাছে দোয়া করা। ৫. প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবনী ও সিরাত অধ্যয়ন এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ। ৬. সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়িন, তাবেতাবেয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিনসহ আউলিয়ায়ে কিরামের জীবনী পাঠ এবং তা থেকে নসিহত বা উপদেশ গ্রহণ করা। ৭. ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা। ৮. আল্লাহর নিদর্শন তথা সৃষ্টিজগৎ নিয়ে গবেষণা করা। ৯. অধিক ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকা, বেশি বেশি নেক আমল করা যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সদকা। জিকির-আজকার, তওবা-ইসতিগফার এবং অধিক হারে দরুদ পড়া ইত্যাদি।

১০. সর্বদা নিজের প্রতিপালক রব্বুল আলামিনের ভয় মনে-প্রাণে রাখা। তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করা, সব আশা-আকাক্সক্ষা পেশ করা, তাঁর ওপর ভরসা রাখা, তাঁর কাছে বিনীত হয়ে আবেদন-নিবেদন পেশ করা। ১১. আল্লাহর বান্দাদের প্রতি সদয় হওয়া ও নম্র অচরণ করা। ১২. সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী দীনি কাজের দাওয়াত দেওয়া। ১৩. ভালো ও সৎ লোকদের সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা করা। ১৪. মিথ্যা ও অশ্লীলতার পথ সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা। ১৫. সর্বদা চোখ, কান ও জবানের হেফাজত করা। ১৬. মানুষের মুখাপেক্ষী না হয়ে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া। সর্বদা আল্লাহর নিয়ামতের আশা করা।

১৭. সত্যবাদী হওয়া। কেননা সত্যবাদিতা সৎপথ প্রদর্শন করে। ১৮. দীনি বিষয়ে মুত্তাকিদের দিকে দৃষ্টিপাত করা। আর দুনিয়াবি বিষয়ে নিজের থেকে কম পজিশনের লোকদের প্রতি লক্ষ্যা করা। তাহলে মনেপ্রাণে শান্তি ও আরাম অনুভব হবে।

মহান রব্বুল আলামিন আমাদের ইমান বৃদ্ধির আমলগুলো বুঝে সে অনুযায়ী চলার তৌফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর