মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

হজ নিবন্ধন শুরু

অনুমোদন পেয়েছে ৭৮০ এজেন্সি

উবায়দুল্লাহ বাদল

সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে সোমবার। তিন দিনের এই নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে কাল বুধবার। চলতি বছরে হজ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ পর্যন্ত তিন ধাপে ৭৮০টি হজ এজেন্সিকে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এসব এজেন্সির মাধ্যমে হজে যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন হজযাত্রী।

যারা এবার হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ আগামী বছরের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকতে হবে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এদিকে হজ ব্যবস্থাপনার সার্বিক প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসসা ইউসেফ ইসসা আল দুহাআলান।  দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে রুট টু মক্কা, হজ ফ্লাইট, বিমান শিডিউল, হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়াসহ হজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবার হজে আমরা চার মাসের কাজ ২০/২৫ দিনে করছি। আজ সৌদি রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে তাদের প্রতিনিধিরা হজের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরাও স্বল্পতম সময়ের মধ্যে হজযাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নানা ধরনের জটিলতা মোকাবিলা করে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ সুষ্ঠু করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।’

জানা গেছে, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে বেসরকারি বিমান চলাচল পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। হজ কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য অতীতে ফ্লাইট শুরুর আগে ৬ থেকে ৭ মাস সময় পাওয়া যেত। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বিদেশি হজযাত্রী হজ পালন করতে পারেননি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় এবার ১০ লাখ বিদেশি হজযাত্রীকে হজ পালনের অনুমতি দেয় সরকার। সৌদি ঘোষণার পর মাত্র এক মাস সময় হাতে পায় বাংলাদেশ। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এবারের হজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতর ঈদের পর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও খোলা রাখা হচ্ছে। এমনকি এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাবও প্রতিদিন অফিস খোলা রেখে হজ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এমন পরিস্থিতিতে সর্বশেষ গত রবিবার তৃতীয় ধাপে ৮০টি হজ এজেন্সিকে হজ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়ে থেকে আদেশ জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ৮ মে প্রথম ধাপে ৬১০টি হজ এজেন্সিকে চলতি বছর হজ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে গত ৯ মে অনুমোদন পায় ৯০টি হজ এজেন্সি। হজ এজেন্সি অনুমোদনের আদেশে বলা হয়েছে, প্রত্যেক হজযাত্রীর সঙ্গে হজ অনুমোদন পাওয়া এজেন্সিগুলোর লিখিত চুক্তি করতে হবে। প্রত্যেক এজেন্সি চলতি বছর সর্বোচ্চ ৩০০ জন এবং সর্বনিম্ন ১০০ জন হজযাত্রী পাঠাতে পারবে। প্রত্যেক হজ এজেন্সিকে মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক হজকর্মী নিয়োগ করতে হবে। যেসব এজেন্সির লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে এবং এ পর্যন্ত হালনাগাদ কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেনি, বিভিন্ন অভিযোগে শাস্তি বা জরিমানা পাওয়া, সৌদি আরবে কালো তালিকাভুক্ত এবং অভিযোগ তদন্তাধীন- এ ধরনের এজেন্সিসমূহের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তালিকা প্রকাশের পর কোনো হজ এজেন্সির তথ্য ভুল বা অসত্য প্রমাণিত হলে এবং কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কারণ দর্শানো ছাড়াই সংশ্লিষ্ট এজেন্সির নাম তালিকা থেকে বাতিলের অধিকার সংরক্ষণ করে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, অনিবন্ধিত কোনো ব্যক্তিকে হজযাত্রী হিসেবে হজে নেওয়া যাবে না। কোনো এজেন্সি এ ধরনের উদ্যোগ নিলে কারণ দর্শানো ছাড়াই ওই এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো, এবারের হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকতে হবে। অন্যথায় নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। পাসপোর্টে হজযাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ) সঠিকভাবে উল্লেখ রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। সে লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনাধীন ২০২০ সালে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে অথবা পাসপোর্ট পরিবর্তন করা হয়েছে তাদের পাসপোর্টের তথ্য হালনাগাদের নিমিত্ত নিম্নলিখিত করণীয়সমূহ অনুসরণ করতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনার নিবন্ধিত হজযাত্রীরা নিবন্ধন পয়েন্ট/কেন্দ্রের মাধ্যমে (পাসপোর্ট চেঞ্জ অপশন ব্যবহার করে) পাসপোর্ট পরিবর্তনের আবেদনকরত : তথ্য হালনাগাদ করবেন। পাশাপাশি প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তি নিবন্ধনের জন্য মনোনীত হয়েছেন তাদের ন্যূনতম আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ সংবলিত হালনাগাদ পাসপোর্টসহ নিবন্ধন পয়েন্ট/কেন্দ্রের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী ও সংশ্লিষ্ট এজেন্সির ক্ষেত্রে নিবন্ধিত হজযাত্রীরা স্ব-স্ব এজেন্সির মাধ্যমে (পাসপোর্ট চেঞ্জ অপশন ব্যবহার করে) ন্যূনতম আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ সংবলিত পাসপোর্টের তথ্য হালনাগাদের আবেদন করবেন। সময় স্বল্পতার দরুন এজেন্সিভিত্তিক হজযাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণের সুবিধার্থে পাসপোর্টের মেয়াদ জটিলতাজনিত কারণে হজযাত্রীর প্যাকেজ স্থানান্তর/নিবন্ধন স্থানান্তর কার্যক্রম ব্যাহত হবে না। হজযাত্রীর ভিসাযুক্ত পাসপোর্টের পেছনে (Back Cover) মোয়াল্লেম নম্বর, মক্কা/মদিনার আবাসনের ঠিকানা সংবলিত প্রিন্টেড স্টিকার সংযুক্ত করতে হবে। প্রিন্টেড স্টিকার সংযুক্ত করা সম্ভব না হলে কমপক্ষে হাতে লেখা উক্ত তথ্য সংযুক্ত করতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীদের জেদ্দা/মদিনা বিমানবন্দর হতে সৌদি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে হজ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি বাতিল করা হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এবার বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন মুসল্লি হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন হজে যেতে পারবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর