বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে ঢুকে ১৯ শিশুসহ ২১ জনকে গুলি করে হত্যা

প্রতিদিন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে ঢুকে ১৯ শিশুসহ ২১ জনকে গুলি করে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে গত মঙ্গলবার ক্লাস চলার সময় রব এলিমেন্টারি স্কুলে ঢুকে ১৮ বছরের এক তরুণ এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১৯ শিশু শিক্ষার্থীসহ ২১ জনকে হত্যা করেছে। এর আগের রাতে মেক্সিকোর  একটি হোটেলে বন্দুকধারীরা গুলি চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করে। এসব ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে হতভম্ব অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এ জন্য বীতশ্রদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন প্যারালাইজড হয়ে গেছে। রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি প্রাথমিক স্কুলে নির্বিচারে গুলির ঘটনায় ২১ জনের প্রাণ গেছে, যাদের মধ্যে ১৯ জন ওই স্কুলের শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার সাউথ টেক্সাসের ইউভালডে শহরের রব এলিমেন্টারি স্কুলে ঢুকে ১৮ বছরের তরুণ নির্বিচারে গুলি চালানো শুরু করে। পরে হামলাকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়। টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন ১৮ বছর বয়সী ওই তরুণের নাম সালভাদর রামোস। সে একাই ওই হামলা চালায় বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়েছে।

টেক্সাস রেঞ্জের পুলিশের বরাত দিয়ে রাজ্যের সিনেটর রোল্যান্ড গুতিয়েরেজ গণমাধ্যমকে বলেন, এ হামলায় ১৯ শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক দুজন নিহত হয়েছেন। গোলাগুলিতে ইউএস বর্ডার পেট্রলের দুই কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন; তবে তারা আশঙ্কামুক্ত। আহত দুই বর্ডার পেট্রল সদস্যের একজনের মাথায় গুলি লেগেছে। এ ছাড়া গুলিতে নিহত প্রাপ্তবয়স্কদের একজন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তার নাম ইভা মিরেলেস। বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, কলেজ পড়ুয়া এক মেয়ে রয়েছে তার। খবরে বলা হয়, টেক্সাসের স্যান অ্যান্টোনিও শহর থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এই স্কুলের ৫০০ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই হিসপানিক ভাষা গোষ্ঠীর। এখানে মূলত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রেডের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়, যাদের বয়স ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। হামলাকারী সম্পর্কে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, হামলার সময় রামোস ‘বডি আর্মার’ পরে ছিল। সে গাড়ি নিয়ে ওই স্কুলে ঢোকে। তার হাতে ছিল একটি হ্যান্ডগান এবং একটি এআর-ফিফটিন সেমি অটোমেটিক রাইফেল। স্কুলে ঢুকে নিজের দাদির ওপর গুলি চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সূচনা করে। হামলাকারী সালভাদর রামোস কলেজ শিক্ষার্থী ছিল। সে ওয়েনডিস ফাস্টফুড চেইনের একটি শাখায় কাজও করত। ওই শাখার সান্ধ্যকালীন ব্যবস্থাপক অ্যাদ্রিয়ান  মেনদেজ বলেছেন, রামোস মূলত কাজ করত দিনের পালায়, বেশির ভাগ সময় তাকে আত্মমগ্ন থাকতে দেখা যেত। ঘাতকের এক সহপাঠী জানিয়েছেন, নিজের পোশাক এবং পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য রামোসকে অন্যদের কটূক্তির শিকার হতে হয়েছিল। একপর্যায়ে ক্লাসে তার উপস্থিতি কমে যায়। পরে স্কুল থেকেই ছিটকে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সহপাঠী জানান, তিনি রামোসের কিছুটা ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন। রামোস মাঝেমধ্যেই তাকে একসঙ্গে ভিডিও গেম দেখার কথা বলত। সহপাঠী আরও বলেন, ‘সে আমাকে এখানে সেখানে মেসেজ দিত। চার দিন আগে তার নিজের ব্যবহৃত এআর-এর একটি ছবি পাঠায়। সঙ্গে ৫.৫৬ রাউন্ড ভর্তি একটি ব্যাকপ্যাক। আমার কাছে মনে হলো, তার কাছে এসব কেন? আর তার মনোভাব ছিল এমন যে, এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’ সহপাঠী জানান, নিজের স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার পর রামোসের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

এদিকে আমাদের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি জানান, টেক্সাসের এ ঘটনায় শোক আর হতাশা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে এক বক্তৃতায় বলেছেন, এভাবে গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনায় প্রক্রিয়া জানাতে তিনি ‘অসুস্থ ও ক্লান্ত’ বোধ করছেন। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘কত ছোট ছোট শিশু এ ঘটনা দেখেছে, তারা তাদের বন্ধুদের মরতে দেখেছে, যেন তারা একটি যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছে। খোদাই জানে, তাদের বাকি জীবনে ওই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে।’

এই হতাহতদের স্মরণে হোয়াইট হাউস ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য ফেডারেল ভবনে পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বাইডেন। এ ছাড়া ওই স্কুল ডিস্ট্রিক্টে এ বছরের শেষ ক্লাস হওয়ার কথা ছিল আজ। কিন্তু এ ঘটনার পর সব ক্লাস ও অন্যান্য কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২৮ মে পর্যন্ত পাঁচ দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউস।

এদিকে টেক্সাসের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘ভয় নয়, বরং একটি বন্দুক লবি এবং একটি রাজনৈতিক দলের দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র প্যারালাইজড হয়ে গেছে।’ সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘উভালদের পরিবারগুলোর সঙ্গে মিশেল এবং আমিও শোকাহত। তারা এমন যন্ত্রণা অনুভব করছে যেমনটি কারও অনুভব করা উচিত নয়।’

মেক্সিকোর হোটেলে হামলায় নিহত ১১ : মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য গুয়ানহুয়াতোর সেলায়া শহরের একটি হোটেলে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে ১৫ জনের মতো সশস্ত্র ব্যক্তি ওই হোটেলে ঢুকে গুলি ও পেট্রলবোমা ছোড়ে। এ বন্দুকধারীরা কাছাকাছি দুটি বারেও হামলা চালায়। ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে দেখা গেলেও, কারা এ হামলা চালাতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে এখানে সান্তা রোসা দে লিমা ও জালিসকো নিউ জেনারেশন কার্টেল নামের প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র রয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসের সর্বশেষ ১৫ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে গুলিতে ৮০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। শুধু গত মঙ্গলবারই দিনের শুরু থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ৩৩টি স্থানে গুলির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় মোট ২৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৩১ জন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর