সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

হায় হায় পার্টি হায় হায় করতে থাকুক : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

হায় হায় পার্টি হায় হায় করতে থাকুক : প্রধানমন্ত্রী

সমালোচকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হায় হায় পার্টি হায় হায় করতেই থাকুক। দেশ এগিয়ে যাবে। জনগণ আমাদের পাশে আছে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২২’ উদযাপন ও ‘জাতীয় মৎস্য পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক মৎস্য খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে জাতীয় মৎস্য পদক-২০২২ প্রদান করেন। মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক পুরস্কার পর্বটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. ইয়ামিন চৌধুরী স্বাগত বক্তৃতা করেন।

‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষে গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে দেশের উন্নয়ন বিষয়ক একটি তথ্য চিত্রও প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে তিন দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় মৎস্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নাই নাই, গেল গেল, হায় হায় করে বেড়াচ্ছে, এ হায় হায় পার্টি হায় হায় করতেই থাকুক। মাঝে মাঝে একটু তাদের তো বলতে দিতে হবে। আর আমরা আমাদের কাজ করে যাই, দেশ এগিয়ে যাক। জাতির পিতাই তো বলে গেছেন বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, তো কেউ দাবায় রাখতে পারবে না।’

মৎস্য উৎপাদনে সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি মাছ আমরা এখন উৎপাদন করতে পারি। একজন মানুষ ৬২ গ্রাম মাছ গ্রহণ করলেই সে আমিষ পেল। আমরা এর চেয়েও বেশি মাছ খাওয়ার সুযোগ পাই এখন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। হাওর অঞ্চলে মৎস্য উৎপাদনের বিশাল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু হাওর না, বাঁওড়, খাল, বিল, বিভিন্ন জলাধার এত জায়গা আমাদের। আমার তো মনে হয় যার যেখানে এ ধরনের জলাধার আছে তারা যদি এ মৎস্য উৎপাদন করার দিকে একটু নজর দেন, শুধু মাছই না, মাছের সঙ্গে কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক সব কিছুই চাষ করা যায়। তিনি বলেন, কাজেই সেগুলো করতে পারলে আমাদের নিজেদের কোনো অভাব থাকবে না। রপ্তানি ক্ষেত্রে আমরা নতুন নতুন পণ্য দিতে পারব। মাছের অভয়ারণ্য তৈরির দিকে নজর দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মৎস্য খাতে গবেষণা বাড়ানোর ওপর ও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকারের বিভিন্ন গবেষণালব্ধ উদ্যোগের ফলে বিলুপ্ত প্রজাতির অনেক মাছকে আবার জলাশয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে এবং মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। আমাদের যে চাহিদা সে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি মাছ এখন উৎপাদন করতে পারি। তিনি বলেন, সবচেয়ে নিরাপদ পুষ্টি পাওয়া যায় মাছ থেকে। যেটা মাংস থেকে হয় না। মাছের যে আবাসস্থল অর্থাৎ অভয়ারণ্য তৈরি করা- এগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। পানির প্রবাহ ভালো থাকা, পানি যাতে দূষণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার এবং কুয়াকাটাসহ সমুদ্র এলকায় চিংড়ি চাষে হ্যাচারি শিল্প গড়ে তোলার গুরুত্বারোপ করে বলেন, নেট দিয়ে চিংড়ির পোনা আহরণে অনেক প্রজাতির মাছ নষ্ট হয়। কাজেই সেগুলো বন্ধ করতে হবে এবং সেখানে হ্যাচারি শিল্প গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি পোনা দেশব্যাপী সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন তিনি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সরকার জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পুষ্টি আসবে মাছ, ডিম, দুধ ও মাংস থেকে। শুধু আমরা নিজেরাই চাহিদা মেটাব না, আমরা এগুলো প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশেও পাঠাতে পারব। তিনি বলেন, মাছ প্রক্রিয়াজাত করে অক্ষত রেখে এর কাঁটা নরম করে ফেলে খাওয়ার উপযোগী করা যায় এবং এটা খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। ঘরে ঘরেও এ পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রেসার কুকারে একটু বেশিক্ষণ মাছ সিদ্ধ করলে এর কাঁটা নরম হয়ে যায় এবং বাচ্চাদেরও খাওয়ানো যায় বলে উল্লেখ করেন। নিজের পরিবারেও প্রধানমন্ত্রী এ রকম করেন বলে একটু রান্নার রেসিপিও দিয়ে দেন তিনি।

মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণে আরও বেশি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমা থেকে আহরণযোগ্য ‘সি উড’ (সমুদ্রের তলদেশীয় জলজ উদ্ভিদ) একটি মূল্যবান সম্পদ। এটা আমরা যত বেশি উৎপাদন করতে পারব তত বেশি বিদেশেও রপ্তানি করতে পারব এবং দেশেও এটার চাহিদা বাড়ছে। সে সঙ্গে শামুক ও ঝিনুক চাষের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এটাও একটি বড় রপ্তানি পণ্য হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। কাজেই এদিকে একটু গুরুত্ব দেবেন। শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় আমাদের মেঘনা নদীতে পিংক পার্ল (মুক্তা) হতো। সেটাও গবেষণা আমরা করছি। কিন্তু সেটাতে খুব বেশি সাফল্য আসছে না। সে দিকটা আরেকটু নজর দেওয়া দরকার। যদিও আমাদের খুব বড় সাইজের (মুক্তা) আসে না, আমাদের ঝিনুক অনেক ছোট। কিন্তু আমাদের রাইস পার্ল যেটা, এটারও কিন্তু অনেক মূল্য আছে। এটা আমাদের খুব ভালো একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। কাজেই সেদিকেও একটু দৃষ্টি দেবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর